পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত জেলেনস্কি
প্রকাশিত:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:০০
আপডেট:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ২৩:১২

যেসব অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদ আছে ইউক্রেনের, তা নিরসনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রস্তুত আছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই কিসলিৎসা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এ তথ্য।
শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিসলিৎসা বলেন, “আমি মনে করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইতোমধ্যে পরিষ্কার করেছেন যে তিনি ইউক্রেনের বিবাদপূর্ণ অঞ্চলগুলো নিয়ে তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এবং বৈঠক করতে প্রস্তুত।”
ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়েও পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কি আলোচনা করতে চান বলে এনবিসিকে জানিয়েছেন কিসিলিৎসা। এনবিসিকে তিনি বলেছেন, “আমরা রাশিয়ার সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করতে চাই। চুক্তির খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে এবং ইউক্রেনের রাজনীতিবিদরা এই খসড়া প্রস্তুতের জন্য রাত দিন কাজ করছেন।”
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার কয়েক বছর পর কৃষ্ণ সাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়ার। টানা প্রায় ২ যুগ দ্বন্দ্ব চলার পর ২০১৪ সালে ইউক্রেনে বসবাসরত রুশভাষী গোষ্ঠীর সহায়তায় ক্রিমিয়া দখল করে গণভোটের আয়োজন করে রাশিয়া। সেই গণভোটে ক্রিমিয়ার অধিকাংশ মানুষ রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয়।
পরের বছর ২০১৫ সালে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে। সেই চুক্তিতে ইউক্রেন ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি ইউক্রেন; উপরন্তু ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে কিয়েভ। এই নিয়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে অভিযান শুরুর ৭ মাসের মাথায় দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও ঝাপোরিজ্জিয়া— ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের এই চার প্রদেশের অধিকাংশ এলাকা দখল করতে সক্ষম হয় রুশ সেনারা। দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে রুশ মানচিত্রেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ বাঁধার সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। যতদিন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের চার প্রদেশ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিলেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতে ’২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর দৃশ্যপটে বদল আসে। ইউক্রেনকে ‘মুক্ত হাতে সহায়তা’য় লাগাম টানেন ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি বলেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চান এবং এজন্য যদি ইউক্রেনকে তার নিজের ভূখণ্ডের ‘কিছু অংশ’ ছাড় দিতে হয়, তাহলে কিয়েভকে তা দিতে হবে।
এর মধ্যে গত ১৫ আগস্ট পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় এবং ১৮ আগস্ট জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। এসব বৈঠক বেশ সফল হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের চাপেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন জেলেনস্কি।
সূত্র : আরটি
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: