৬,০০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৩:০৬
আপডেট:
১৯ আগস্ট ২০২৫ ১৫:১২

যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাবিষয়ক ভিসা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব শিক্ষার্থী ভিসার নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, অনেকেই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে— বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালানো, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, চুরি, এমনকি সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করার মতো কর্মকাণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভিসা বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার জন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইন লঙ্ঘন করেছেন। বাকি প্রায় ২০০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম’ বলতে এখানে এমন কার্যকলাপ বোঝানো হয়েছে যা মানবজীবনের জন্য হুমকি তৈরি করে বা মার্কিন নিরাপত্তা ও আইনের পরিপন্থী।
এই পদক্ষেপকে অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী ও কড়াকড়িভিত্তিক নীতির অংশ হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অভিবাসীদের ওপর একাধিক নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিশেষ করে, কিছু শিক্ষার্থীকে লক্ষ্য করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যারা যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। প্রশাসনের ভাষ্য মতে, তাদের আচরণ ‘ইহুদিবিরোধী’ ছিল। তবে এই অভিযোগের ব্যাখ্যা বা নির্দিষ্ট উদাহরণ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেনি।
এছাড়া, ২০২৫ সালের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করে। তখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে জুন মাসে এই প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হলেও, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী— প্রত্যেক আবেদনকারীকে তাদের সামাজিকমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো প্রকাশ করতে হয়।
সেই সময় জানানো হয়েছিল, ভিসা আবেদনকারীদের অতীত কার্যকলাপ থেকে যাচাই করা হবে তারা কখনও যুক্তরাষ্ট্র, এর জনগণ, সংস্কৃতি, সরকার বা কোনো নীতির বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন কি না। একইসঙ্গে ভিসা অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেন তারা এমন আবেদনকারীদের চিহ্নিত করেন যারা বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে অথবা ইহুদিবিরোধী সহিংসতায় জড়িত থাকতে পারে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চলতি বছরের মে মাসে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, জানুয়ারি থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আমরা জানি না শেষ পর্যন্ত কত ভিসা বাতিল হবে। তবে এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
রুবিও আরও বলেন, যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিথি হয়ে এসেছে অথচ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের আমরা দেশে রাখবো না। আমরা তাদের ভিসা বাতিল করবো।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে ডেমোক্রেট দল। তারা বলছে, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবস্থা নেওয়া ‘যথাযথ প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন’। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো কোনো অপরাধে জড়িত না হয়েও শুধুমাত্র মতপ্রকাশের কারণে টার্গেট হচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: