আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়
প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১২:৩৮
আপডেট:
১০ আগস্ট ২০২৫ ১৫:২২

আগামী ১৫ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি হবেন আলাস্কায়। দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশার পর এই বৈঠক কেবল দুই দেশের সম্পর্কই নয়, বিশ্ব রাজনীতির ধারা পাল্টে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত নির্ধারণে এই আলোচনার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বৈঠকের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে দুই দেশের প্রশাসন। বিশ্ব রাজনীতিতে এতদিন ধরে ঝুলন্ত থাকা বহু প্রশ্ন এই বৈঠকে আলোচনার টেবিলে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প ও পুতিনের এই ‘বিগ মিটিং’ অনেকটাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের কূটনৈতিক পরিস্থিতি।
ট্রাম্পের জন্য এই বৈঠক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক এক মাইলফলক। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও শুরুতে রাশিয়ার প্রতি কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি না হওয়ায় পরবর্তীতে কঠোর শুল্ক আর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে মস্কোর ওপর চাপ বাড়িয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে আলাস্কায় বৈঠক হওয়ার ঘটনা ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আর পুতিনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ একদিকে সামরিক ও রাজনৈতিক মিশন। পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করাই তার মূল লক্ষ্য। এছাড়া, ন্যাটোর বিস্তার রোধ করাও তার অগ্রাধিকার। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে ‘শতাব্দীর বৃহত্তম ভূরাজনৈতিক বিপর্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুতিন বারংবার। তিনি চান রাশিয়ার পুরনো প্রভাব ফিরে আসুক, আর তাই আলোচনায় ইউক্রেনের অধিকৃত অংশকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করবেন এবং ন্যাটোর প্রসার রোধে জোর দেবেন।
তবে বৈঠক থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাদের ভূখণ্ড ছাড়ার প্রস্তাবে একদমই রাজি নন। আর অধিকৃত ভূখণ্ডের ওপর এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কূটনৈতিক সমঝোতার পথ কঠিন করে তুলেছে।
আলাস্কা কেন এই বৈঠকের ভেন্যু হলো, তাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা দরকার। একসময় রাশিয়ার অংশ ছিল এই অঞ্চল, যা ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করা হয়। তাই আলাস্কায় বৈঠক আয়োজন একদিকে দুই দেশের ইতিহাস ও সম্পর্কের প্রতীকী অর্থ বহন করে। অন্যদিকে, এটি তুলনামূলক কম জনবসতিপূর্ণ, নিরাপদ ও সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এলাকা হওয়ায় শীর্ষ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সহজ হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল এই বৈঠককে কোনো দেশের রাজধানীর বাইরের নিরপেক্ষ মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে কোনো পক্ষই নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে পারবে না। আলাস্কা সেই মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যা কূটনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তাই এই বৈঠক কেবল দুই দেশের সম্পর্কের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যত, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা—সবকিছুর ওপর তার প্রভাব পড়বে দীর্ঘদিন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: