এসএসসি পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ অনুপস্থিতির কারণ ‘বাল্যবিয়ে’
প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২৫ ১৭:১৭
আপডেট:
১৯ জুন ২০২৫ ২১:৪৫

এই বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৬ হাজার ৩৮৯ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে বোর্ডের সংগ্রহ করা এক হাজার ২০৩ জনের তথ্য অনুসারে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের হার ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রায় সমান।
এছাড়াও অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে কর্মজীবনে যুক্ত হয়েছে। অসুস্থতা, প্রস্তুতির অভাব, পরিবারে মৃত্যুসহ নানা কারণে বাকিরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। গর্ভধারণের কারণে ২১ জন মেয়ে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশ ঘোষণা করেছে তারা পড়াশোনা বন্ধ করে দেবে, বাকিরা পরবর্তী বছর পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
গত ১০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় ১৩ মে। এই বছর বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় কারণ অনুসন্ধানের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছিল। যেসব পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেও প্রথম দিন থেকে অনুপস্থিত তাদের তথ্য গুগল ফরমে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার জানান, এই তথ্যাদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠানো হয়েছে নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে বাল্যবিয়ে, আর্থিক অসচ্ছলতা ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
অনুপস্থিতির সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, তাদের অধিকাংশই মেয়ে শিক্ষার্থী, অনিয়মিত শিক্ষার্থীর চেয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির হার অধিক। তাছাড়া শহর অঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে পরীক্ষায় অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিয়ের জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি এবং অসুস্থতার জন্য ২৫ শতাংশ অনুপস্থিত ছিল। প্রায় ১২ শতাংশ পরীক্ষার্থী ভালো প্রস্তুতির অভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে বা বিদেশ চলে গেছে ফলে পরীক্ষায় অনুপস্থিত আছে এমন পরীক্ষার্থীর হার প্রায় ১০ শতাংশ। প্রায় ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মারা গেছে ১৯ জন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থীর বিয়ে করার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এই হার অনুপস্থিতির কারণগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বাল্যবিয়ের কারণে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর ৯৭ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ৮৭ শতাংশ পরীক্ষার্থীর বাসস্থান গ্রামাঞ্চলে।
ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন ১৩টি জেলার মধ্যে মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলায় যথাক্রমে ৬৫ শতাংশ ও ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ বাল্যবিয়ে। ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা কী? প্রায় ৫১ শতাংশ বলেছে তারা পড়াশোনা করবে না। যারা বলেছে আর পড়াশোনা করবে না, তাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনের উপসংহার অংশে বলা হয়, নিঃসন্দেহে এগুলো উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে। প্রায় ৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। ১০ বছর পড়াশোনার পর ফরম পূরণ করেও আর্থিক সংকটে পরীক্ষা না দিতে পারাটা দুর্ভাগ্যজনক। সমাজ বা রাষ্ট্রের কার্যকর সহযোগিতা থাকলে তাদের ভাগ্য ভিন্ন রকম হতে পারত।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের কারণ অনুসন্ধানের কার্যক্রম এবারই প্রথম এবং এটি শুধু ঢাকা বোর্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে পরিচালনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্য বোর্ডের ক্ষেত্রেও পরিচালনা করা যেতে পারে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: