ইতিবাচক রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয়, ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে ডলারের মজুত
প্রকাশিত:
২৩ জুন ২০২৫ ১২:৩৮
আপডেট:
২৩ জুন ২০২৫ ১৬:৫৩

দেশে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। এই দুই খাতে প্রবৃদ্ধির ফলে ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলারের মজুত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে ব্যাংকগুলোর মোট বৈদেশিক মুদ্রা মজুত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এপ্রিল মাসে ছিল ৪ হাজার ৪৯৫ মিলিয়ন এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ছিল ৪ হাজার ২৫৫ মিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বরের এ পরিমাণ ছিল ২০১৯ সালের জুন মাসের পর সর্বনিম্ন, যখন ডলার মজুত ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৯১.১৮ মিলিয়ন ডলার। ব্যাংকাররা জানান, গত তিন মাসে ডলার মজুত ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে মূলত রেমিট্যান্স আয় ও রপ্তানি আয় বাড়ার কারণে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ২৭দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে (২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার) তুলনায় ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স আয় এসেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, রপ্তানি আয়ও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। আরো একটি কারণ হলো-বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বড় অংকের বৈদেশিক পরিশোধ করেছে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পরবর্তী মাসগুলোতে তুলনামূলক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে রাখতে পেরেছে।
এছাড়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে ব্যাবসায়িক পরিবেশ দুর্বল হওয়ায় ডলারের চাহিদাও কিছুটা কমে গেছে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অস্থিরতা এবং শিল্প খাতে উৎপাদন আই কমে যাওয়ায় কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি কমেছে, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম সীমিত করেছে বা সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে।
ব্যাংকারদের মতে, হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথে টাকা পাচার কমে আসার ফলে ব্যাংকিং খাতে বৈধ পথে পাঠানো ডলারের পরিমাণ বেড়েছে। ইন্টারব্যাংক এবং অনানুষ্ঠানিক বাজারের বিনিময় মূল্যের ব্যবধান কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা এখন অধিক হারে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাচ্ছেন। আগে অধিক মুনাফার আশায় তারা হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক পথে টাকা পাঠাতেন।
তবে এখন সরকার নির্ধারিত ইন্টারব্যাংক বিনিময় হার বেড়ে ২০২৫ সালের মে মাসে প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হয়েছে, যেখানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ছিল ১১০ টাকা, জুন ২০২৩-এ ছিল ১০৬ টাকা এবং ২০২২ সালের জুন মাসে ছিল ৯৩ দশমিক ৪৫ টাকা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে না। বরং নিজেই ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ২০২৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বৈদেশিক লেনদেন ও বিনিয়োগ হিসাব সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: