কর্নাই গ্রামে আউশ ধানের বাম্পার ফলন
প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৮
আপডেট:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২০

ভোরের প্রথম রোদে যখন কর্নাই গ্রামের মাঠে হাওয়ায় হেলে দুলতে থাকে সোনালি শীষ, তখন মনে হয় গ্রামটা যেন পরেছে সোনার গহনা। দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের এ গ্রাম একসময় ছিল অনাবাদি ও বেলে মাটির জন্য পরিচিত। অথচ আজ সেখানে সমবায় ভিত্তিতে আবাদ হচ্ছে ব্রি ধান-৯৮ জাতের আউশ। আর সেই ধানই এখন কৃষকের ঘরে এনে দিচ্ছে বাম্পার ফলন, মুখে মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছে আনন্দ।
এ গ্রামের কৃষকেরা সমবায় ভিত্তিতে ব্রি ধান-৯৮ জাতের আউশ চাষ করে সফলতার নতুন গল্প লিখেছেন। ১১০ দিনের মধ্যে জমি থেকে ধান ঘরে তুলেছেন। প্রতি একরে ৮৫ থেকে ৯০ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়ে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। আর বাজারে ধানের দামও আশানুরূপ—প্রতি মণ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। শুধু তাই নয়, গোখাদ্যের সংকটের সময়ে খড়ও কৃষকদের বাড়তি আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে—একশ আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮৫ শতক জমিতে ব্রি ধান-৯৮ আবাদ করেছি। ফলন হয়েছে ৮৫ মণ। এ ধান বিক্রি করেই আলুর মৌসুমের খরচ মেটাতে পারব।
আরেক কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, সমবায় ভিত্তিতে আউশ ধান চাষ শুরু করার ফলে শুধু উৎপাদন খরচ কমছে না, পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হচ্ছে। ফলে ফলনও বেড়েছে। আগামী বছরও এই জাতের ধান আবাদ করব।
কৃষক মোশারফ হোসেন জানান, ২০০ শতক জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছি। এ সময়টায় কৃষকদের হাতে ফসল বা টাকা-পয়সা খুব একটা থাকে না। তাই এখন ধান ঘরে তোলা তাদের জন্য আশীর্বাদ। তিনি বলেন, ধান বিক্রি করে আমরা আলু চাষের খরচ যোগাচ্ছি। এই সময়ে ধান উৎপাদনের আনন্দ অন্য কোনো ফসলে নেই।
দিনাজপুর সদর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, একসময় এ অঞ্চলের জমি শুধু রবি শস্যের জন্য ব্যবহার হতো। আমন ধান এখানে তেমন ফলত না। কিন্তু সরকারের উদ্যোগে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আউশ ধানের আবাদ শুরু করা হয়েছে। এখন সেই জমিতেই তিন ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষকরা শুধু ধান বিক্রি করেই লাভবান হচ্ছেন না, খড় বিক্রি করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুম তুষার বলেন, এ বছর উপজেলাতেই ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ২২০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে—সরকারের সেই নির্দেশনার ভিত্তিতেই কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এখন কৃষকেরা স্বল্প সময়ে ফলন পাচ্ছেন, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: