রবিবার, ১৭ই আগস্ট ২০২৫, ২রা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


যাত্রী সংকটে থমকে গেছে পিরোজপুর লঞ্চঘাটের প্রাণচাঞ্চল্য


প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫৬

আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৩

ছবি ‍সংগৃহিত

একসময় বিকেল গড়ালেই পিরোজপুরের হুলারহাটসহ জেলার লঞ্চঘাটগুলোতে দেখা যেত অন্যরকম এক চিত্র। ব্যাগ কাঁধে মানুষজন সারিবদ্ধভাবে লঞ্চে উঠছেন, কেউ পরিবার নিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন, কেউবা ব্যবসার কাজে রাজধানীর পথে। লঞ্চের সাইরেন বাজতেই নদীর ঢেউ কেটে এগিয়ে যেত লঞ্চ। নিয়ে যেত হাজারো যাত্রীকে তাদের গন্তব্যে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে এভাবেই নৌপথ ছিল ঢাকা-পিরোজপুর যাতায়াতের প্রধান ভরসা।

‎কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই দৃশ্য এখন কেবল স্মৃতি। একসময় যেখানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮টি লঞ্চ পিরোজপুর থেকে শত শত যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করত, সেখানে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একটিও লঞ্চ চলছে না এ রুটে।

‎বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, যাত্রী সংকটের কারণে তারা লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ রেখেছে। পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে যাতায়াত অনেক সহজ হওয়ায় যাত্রীরা ধীরে ধীরে লঞ্চের পরিবর্তে বাসে যেতে শুরু করেছেন। ফলে ব্যবসায়িকভাবে লঞ্চ চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। মানুষ এ কারণে লঞ্চে সময় অপচয় করে যেতে চাইছে না। যাত্রী সংকটের কারণে প্রতিদিনের খরচ উঠছে না।

পিরোজপুর জেলার হুলারহাট, স্বরূপকাঠি, কাউখালি, ভান্ডারিয়া, ইন্দেরহাটসহ মোট আটটি ঘাট থেকে লঞ্চে যাত্রী উঠতেন। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ যাত্রী লঞ্চে ভ্রমণ করতেন। লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব যাত্রী পড়েছেন বিড়ম্বনায়।

‎সরেজমিনে পিরোজপুরের হুলারহাট লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, এক সময়ের জমজমাট এ ঘাটটি যাত্রী সংকটে অলস সময় পার করছে। আগে যেখানে সারি সারি বিলাসবহুল লঞ্চ নোঙর করা থাকতো সেখানে এখন স্থান পেয়েছে বালিবোঝাই কয়েকটি কার্গো। তবে প্রতিদিনই কিছু যাত্রী অভ্যাসবশত ঘাটে চলে আসেন লঞ্চে উঠবেন ভেবে। কিন্তু লঞ্চ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাসে চেপে গন্তব্যে যেতে হয় তাদের। এতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে খরচও।

‎এদিকে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঘাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরাও। লঞ্চ টার্মিনালকে ঘিরে দোকান, খাবারের হোটেল, ফেরিওয়ালা সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্ভর করতেন যাত্রীদের ওপর। যাত্রী না থাকায় এখন সেই ব্যবসায়ও পড়েছে ধস।

‎হুলারহাট লঞ্চ টার্মিনালে বসে আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, দূরপাল্লার রুটে আমাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং আরামদায়ক হলো লঞ্চ। এখন বাসে যেতে হয় ভিড় আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। আমরা চাই পুনরায় ঢাকা-পিরোজপুর রুটে লঞ্চ চালু হোক।

‎স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার শেখ বলেন, ঢাকা যেতে লঞ্চই ছিল সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। বিকেলে লঞ্চে উঠে সকালে ঢাকা পৌঁছাতাম। এখন বাধ্য হয়ে বাসে যেতে হয়। খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝুঁকিও বেশি। লঞ্চ আবার চালু হলে আমরা উপকৃত হবো।

‎হুলারহাট লঞ্চঘাটের পাশেই ছোট্ট চায়ের দোকান চালান মো. আবিদ মোল্লা। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন লঞ্চের যাত্রীদের ভিড়ে আমার দোকানে বিক্রি ভালো হতো। এখন যাত্রী নেই, দিনে ২০০ টাকারও বিক্রি হয় না। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

‎আরেকজন ব্যবসায়ী, মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শুধু যাত্রী নয়, আমরা ব্যবসায়ীরাও বিপদে আছি। ঘাটকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকা ছিল। এখন ঘাট ফাঁকা পড়ে আছে। আমরা চাই, আবার লঞ্চ চালু হোক।

‎পদ্মা সেতু একদিকে খুলে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা, সহজ করেছে যোগাযোগব্যবস্থা। কিন্তু তার প্রভাব পড়েছে নৌরুটের ওপর। পিরোজপুরের মানুষ এখনও আশা করে, একদিন হয়তো আবারও ঢাকার পথে লঞ্চ ছাড়বে, নদীর বুক চিরে চলবে এসব লঞ্চ দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

‎এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, হুলারহাট লঞ্চঘাটটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী লঞ্চঘাট। তবে পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে ঘাটটিতে লঞ্চ চলাচল কমে গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় যারা লঞ্চ ব্যবসায়ী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবসায়ীক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top