‘বানের পানিতে সব ধান ডুবি গেছে’
প্রকাশিত:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১২:৩৫
আপডেট:
১৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:২৮

‘জমিতে পানি ঢুকে গেছে। ধানও ডুবে গেছে। উপায় নেই কাঁচা ধান কেটি নিচ্ছি। গরুর (গবাদিপশু) খাওয়ার হবে। বানের (বন্যার) পানিতে সব ধান ডুবি গেছে। এই ধানটুকু না কাটলে তাও পাওয়া যাবে না। ধান তো পেলাম না- এবার আমরা কী খেয়ে বাঁচব, সেই চিন্তায় দিন যাচ্ছে।’
ফসল ডুবে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে ভরা গলায় কথাগুলো বলছিলেন শমসের আলী। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে। পুরো এই ইউনিয়নটি পদ্মানদীর ভেতরে। পদ্মার পানি বাড়ায় সঙ্গতকারণে ইউনিয়নটির ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। ফলে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা মানুষগুলো চর ছাড়ছেন।
শমসের আলী বলেন, ২৫ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে পাঁচ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। একটুকুও ধান পেলাম না। সারা বছর কীভাবে চলবো। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত রয়েছে পদ্মা নদীর পানির স্তর। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন- সকাল ৯টায় পদ্মা নদীর রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। বুধবার একই সময়ে পানির উচ্চতা এটাই ছিল। পানি বাড়া ও কমার বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান- আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে চকরাজাপুর ইউনিয়নের শত শত হেক্টর ফসলি জমি। এতে প্রায় ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বহু বাড়ি-ঘর। অনেকে গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। তবে যারা এখনো রয়েছেন চরে তাদের নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চকরাজাপুর ইউনিয়নের মাঠগুলোতে এখন পানি আর পানি। ফসলি মাঠ তলিয়ে গেছে। ঘর বাড়িগুলোতে পানি উঠেছে। অনেকেই লোকালয়ে ঘর ভাড়ায় পরিবার নিয়ে উঠেছেন। ফলে সব থেকে বেশি দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে গবাদিপশু নিয়ে। ইউনিয়নের নীচ পলাশী ফতেপুর মাঠে সবচেয়ে বেশি ফসলহানি হয়েছে। যাদের ধান কিছুটা পেকেছে, তারা সেটা কাটতে গিয়ে শ্রমিক সংকটে পড়েছেন। এখন একজন শ্রমিক একবেলা ধান কাটার জন্য নিচ্ছেন ৮০০ টাকা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নের পলাশী ফতেপুর, কালিদাসখালী, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া এবং দিয়াড়কাদিরপুরের প্রায় ৬০০ বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রায় ৫০টি পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। নদীতে পানি বাড়লে চরবাসি বেশি আতঙ্কিত হয়। আর আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে চরে বসবাস করি। ভয়াবহতার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। তবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছি।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে পদ্মার ভাঙনে প্রায় সহস্রাধিক বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার, বিজিবি ক্যাম্প, হাজার হাজার বিঘা আবাদি-অনাবাদি জমি চলে গেছে পদ্মার গর্ভে। ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে হাজারও পরিবার।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলার ৭৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার জানান, প্রাথমিকভাবে ২২০টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) তাদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। আরও বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: