ওষুধ কাঁচামালে চরম আমদানিনির্ভরতা
চীন-ভারতের সঙ্গে পাঁয়ে পাঁয়ে লড়তে এপিআই শিল্পে ২০% প্রণোদনার প্রস্তাব
প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৩
আপডেট:
১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৩৫
স্থানীয় বাজারের ৯৮% ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও কাঁচামালে চরম আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ। এপিআই (একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইঙ্গ্রেডিয়েন্ট) আমদানিতে বছরে শতকোটি টাকা যাচ্ছে বিদেশে। এই নির্ভরতা কমাতে চীন ও ভারতের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবার এপিআই শিল্পে সর্বোচ্চ ২০% প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে ‘এপিআই শিল্পের উন্নয়নে নীতি ও বাস্তবায়ন কৌশল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব মতামত তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। সভার আয়োজন করে অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশ (এএইচআরবি)।
সভায় সঞ্চালনা করেন, বিএমইউর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও এএইচআরবি'র আহ্বায়ক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ।
এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণে ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, ভারত ও চীনের মতো বাংলাদেশেও এই খাতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে।
তিনি এই শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা, স্বল্পসুদের ঋণ ও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুরও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুর রহমান প্রতিযোগিতার কৌশল বুঝতে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের ভারত ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তাদের এপিআই শিল্প সম্প্রসারণের কৌশল ভালোভাবে বোঝা দরকার। ভারত তাদের এপিআই শিল্প সম্প্রসারণের জন্য স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আমাদেরও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বাস্তবসম্মত নীতিগত সহায়তার দাবি জানিয়ে বলেন, শুধু কমিটি গঠন করে হবে না। গত দেড় মাসে সরকারের যত কমিটি হয়েছে, সেখানে বাপি বা এপিআই শিল্পের কোনো প্রতিনিধিত্বই রাখা হয়নি। সরকার যদি নীতিগতভাবে সাপোর্ট না দেয়, তাহলে এ শিল্প কখনোই টেকসই হবে না।
তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের দেশে এপিআইয়ের কাঁচামাল এখনো চীন ও ভারত থেকে আসে। কিন্তু সেখানে এমন দামের মেটারিয়াল আনা সম্ভব নয়, যাতে আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি।
এপিআই পার্কের বর্তমান হতাশাজনক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, সরকারের উৎসাহে ৪৯০ কোটি টাকা লোন নিয়ে ২ বছর আগে এপিআই পার্কে কারখানা স্থাপন করছি। এখন প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা সুদ দিতে হচ্ছে। তবে এখন সরকার থেকে বলছে গ্যাস পাওয়া যাবে না। এই অবস্থায় আমার পর আর কোনো পাগল এখানে আসবে এপিআই পার্ক করতে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বিজ্ঞানী আইসিডিডিআরবি’র ড. আহমেদ এহসানুর রহমান দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেন, এপিআই শিল্পের ৯০ ভাগ সমস্যা আমার জানা। গত এক যুগ থেকে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তবে উত্তরণ হচ্ছে না। আগে এপিআই নিয়ে সরকার ও কোম্পানিগুলোর দর্শন ঠিক করতে হবে।
সভায় বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর ওষুধ শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়বে। সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনের বিকল্প নেই। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া গেলে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যেই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতে পারবে বলে তারা মত দেন।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: