965

05/06/2024 সত্যতো এটাই...

সত্যতো এটাই...

মোঃ শাহারুল ইসলাম

৬ জুলাই ২০২০ ১৫:৫৫

একটু আগে দেখলাম, ডলি সরকার নামের একটা মেয়ে ৩৮তম বিসিএস- এ পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন। মেয়েটি অত্যান্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসছেন। তাঁর এই সাফল্য মনে রাখার মত। আমার আপন ভাই, আমার ইমিডিয়েট বড়, তিনিও পুলিশের ২৪তম ব্যাচের পুলিশ ক্যাডার। যার কথা এই ডলি সরকারের সাফল্যের খবরের সাথে মনে পড়ে গেল।

না, আমাদের পরিবারে দারিদ্রতা হয়তো ছিলনা কিন্তু আমার এই ভাইটি যে এত বড় কিছু হবেন, সেটা অনেকেই ভাবতেও পারে নাই। আমার বাবা তাঁর ব্যক্তি জীবনে জিরো থেকে হিরো ছিলেন সত্যি কিন্তু সেটা ছিল তাঁর একাডেমিক শিক্ষা ছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ রহমতগুনে আর তাঁর অগাধ পরিশ্রমের ফল।

আমার বাবা ছিলেন প্রচন্ড একজন সৎ মানুষ এবং তিনি চাইতেন ; তাঁর সন্তানেরা ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হোক। তাই বড় ভাই এবং মেঝো ভাইকে আলিয়া শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা সেভাবে পড়াশুনাও করতে থাকে। এরই ধারবাহিকতায় আমার আজকের এই এসপি ভাইকেও মাদ্রাসায় পড়াবেন, এটাই ট্রাডিশন হয়ে আসতেছিল এবং বয়স বার/তের পর্যন্তও আমার ভাই নাকি স্কুল/মাদ্রাসারও কোন শিক্ষা গ্রহন করেনি। যে বয়সে একটি ছেলে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার কথা, তখন তিনি বাবার সাথে জমিতে গিয়ে হাল চাষও করেছেন। শুধু মাত্র আমার মায়ের একান্ত ইচ্ছায় বাড়ির পাশের দরিদ্র সদ্য পুলিশের চাকুরী হারানো এক গ্রাম্য প্রাইভেট টিউটরকে ঠিক করা হয় মাসে চার সের চাল দেবার বিনিময়ে শরীফুলকে পড়াবে বলে।

শিক্ষক মতিয়ার রহমান আমার মায়ের কথায় রাজি হয়ে বাবার চোঁখের আড়ালে পড়াতে আসেন। প্রথম দিনে বই না থাকায় আমাদের কাচারি ঘরের ডাবায় বর্ণমালাগুলো লিখে দিয়ে যায় এবং পড়া শিখিয়ে পরবর্তী দিনের এই কাজটাকেই হোম ওয়ার্ক হিসাবে দিয়ে যায়। আশ্চার্য্য হলেও সত্য যে, আমার ভাই সম্পূর্ণ পড়াটাই ঠিকঠাক করে দেয়। মাস্টার সাহেবতো মহা খুশি এবং আমার মা-কে ডেকে বলেন, "ভাবী, আপনার এই ছেলেকে কালই বই কিনে দিবেন এবং আমি একে পড়াব। ও একদিন একটা কিছু হবেই।" সত্যি বলতে কি মাত্র ছয় মাসে ফোরের বই কমপ্লিট করে ফাইভে উত্তীর্ণ হয়। এবং তখন থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু হয়।স্কুলের স্যারেরা এই বিরল প্রতিভার প্রসংশা আমার বাবার কাছে করায় আমার বাবাও তখন থেকে ভাইয়ের পড়াশুনার ব্যাপারে সিরিয়াস হন।

ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। হাইস্কুলের সমস্ত স্যারেরা শরীফুলের মেধার ব্যাপারে বিস্মিত হন। আর তারই ধারাবাহিকতায় জীবনের প্রত্যেকটি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়। আইএসসি পরীক্ষার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিং কমিশনার পদে চাকুরি পায়। তার আগে বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ভর্তি হয়। চাকুরিতে ট্রেনিংকালিন যে কষ্ট সেটা সহ্য করতে না পারায় আবারও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এ ফিরে আসেন। পড়া শেষে বাগেরহাট পৌরসভার এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সাত বছর চাকুরী করেন। ২৩তম বিসিএস-এ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার হন। ২৪তম বিসিএসে পুলিশে যোগ দেন। জীবনে একটা টাকা ঘুষ বা অবৈধভাবে আয় তিনি গ্রহণ করেননি- এটাই সত্য। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেন নি যার বহু নজির তিনি রেখে চলেছেন। তাঁর একটাই কথা, "ভাল থাকার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়না।" আমার ভাই শুধু আমাদের গর্ব বা অহংকার নয়, তাঁর চরিত্রগুণ নিয়ে আমাদের তেরখাদার প্রত্যেকটি মানুষ গর্ব করতে পারবে আরো একশো বছর ধরে।

সত্যি বলছি, "সত্যকে ঢেঁকে রাখা যায়না, তাই আবেগে আপ্লুত হয়ে অনেক সস্তা কথাগুলো শুধু এই জন্য বলছি, "আমাদের সবারই কারোনা কারো থেকে শিক্ষা-দীক্ষা নিতে হয় যা আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের জন্য খুবই দরকার।" যেমন- আমার ভাইয়ের এই শিক্ষা আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের জন্য পাথেয় হয়ে কাজ করছে বলেই আমরা সবাই বড় মুখ করে বলতে পারি, "আমরা পড়াশুনা জানি।"

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি বড় মানুষের জীবনই একটা একটা উদাহরণ যা ইতিহাস খুললেই চোঁখে পড়ে। আমাদের তেরখাদার প্রত্যেকটি পরিবারকেই আমাদের পরিবার ভাবতে শিখতে হবে, তবেই আমরা শিক্ষিত হতে পেরেছি- এই কথটি গর্বের সাথে বলতে পারবো।

আজ আমাদের সামনে আগামীর স্বপ্ন- আমাদের সন্তানেরা। যাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে আমি অন্ততঃ কার্পণ্য করিনা। সব মানুষকেই মানুষের মর্যাদা দিতে শিক্ষা নিতে পারলেই আমরা নিজেদেরকে বড় মানুষ দাবী করতে পারবো। আমার ভাইয়ের দ্বারা যতটুকু সৎ পথে থেকে উপকার করা সম্ভব সেটা তেরখাদাবাসী আশা করতে পারে- এটা আমি হলপ করে বলতে পারি।

কারণ তাঁর দৃষ্টিতে ‍"সত্যই সুন্দর। আর এটাই সত্য।"

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]