9082

05/19/2024 ইফতারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইফতারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক

৩ এপ্রিল ২০২২ ০২:৫৫

রমজান রহমত-বরকতের মাস। এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার পর যে খাবারের সমাপ্তি হয় এটাকে ইফতার বলে। ইফতারের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত।

ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইফতারের সময় প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাত সেখান (সূর্য বের হওয়ার স্থান) থেকে চলে আসে এবং দিন (সূর্য অস্ত যাওয়ার স্থান) থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায় তখন রোজাদার রোজা খুলে ফেলবে।’(বুখারি, হাদিস : ১৯৫৪)

আগেভাগে ইফতার করা সুন্নত

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যতদিন লোকেরা দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন দ্বীন স্পষ্ট ও বিজয়ী থাকবে, কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতারি করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫০)

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ হাদিস : ১৬৪৩)

নবী (সা.) ইফতারের সময় দোয়া করতেন। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর কাছে সংবাদ পৌঁছেছে, নবী (সা.) যখন ইফতার করতেন, বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।’অর্থাৎ হে আল্লাহ, তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার করেছি।’ (আবু দাউদ হাদিস : ২৩৫৮)

নির্ধারিত দোয়া ছাড়াও কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে জীবনের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। জান্নাত চাওয়া এবং দোজখ থেকে নাজাত লাভের দোয়া করা।

ইফতার শেষ করার পরও দোয়া পড়া সুন্নত। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইফতার করার পর দোয়া পড়তেন, ‘জাহাবাজ জামায়ু ওয়া ইবতাল্লাতিল আরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু।’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হয়ে গেছে, রগ সিক্ত হয়ে গেছে এবং আল্লাহ চাইলে প্রতিদান পাক্কা হয়ে গেছে।’ (আবু দাউদ হাদিস : ২৩৫৪)

ইফতারের পরও রোজাদারের অন্তর আশা ও ভয় উভয়ের মাঝে থাকা উচিত। কারণ, জানা তো নেই, এ রোজা কবুল হলো কি না, রোজার যে উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা, সেটা হলো কি না। যেকোনো ইবাদত শেষ করেই এমনভাবে সময় পার করা উচিত।

রোজাদারকে ইফতার করানোর সওয়াব

রোজাদারকে ইফতার করানো অনেক বড় নেক কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রোজাদারের প্রতিদান সমান প্রতিদান দেওয়া হবে এবং রোজাদারের প্রতিদান থেকেও কোনো প্রতিদান কমানো হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)

এছাড়াও রোজাদারকে ইফতার করানো আল্লাহর রাস্তায় খরচের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এতে মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং পিপাসার্তকে তৃষ্ণা মেটানোর প্রতিদানও পাওয়া যাবে। তবে ইফতার করানোটা হতে হবে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। মানুষকে দেখানোর জন্য নয়। নিজের বড়ত্ব প্রকাশের জন্য নয়। অন্যথায় অনেক টাকা ব্যয় করে ইফতারের আয়োজন করলেও কোনো উপকার বয়ে আনবে না।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাত বরবাদ কর না সে ব্যক্তির মতো যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশে ব্যয় করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)

ইফতারের দাওয়াত খেয়ে পড়ার দোয়া

কারও বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত খেলে কিংবা ইফতার ছাড়াও যেকোনো দাওয়াত খেলে খাবার শেষে দোয়া পড়া সুন্নত। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কারও এখানে ইফতার করলে দোয়া পড়তেন-

أفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ؛ وَأكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ المَلاَئِكَةُ

উচ্চারণ : আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকাতু।

অর্থ : রোজাদার তোমাদের নিকট ইফতার করবে, তোমাদের খাবার নেককার লোক খাবে এবং ফেরেশতা তোমাদের ওপর রহমতের দোয়া করতে থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৪৮)

ইফতার কী দিয়ে করা উচিত

যেকোনো খাবার ইফতারে থাকতে পারে। কোনো সমস্যা নেই। তবে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) নামাজের পূর্বে তাজা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না থাকলে যেকোনো খেজুর দিয়ে, আর তাও যদি না থাকত তা হলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৯৬)

ইফতারে সংযম অবলম্বন

এ মাস উদরপূর্তির নয়; বরং হলো সংযমের। ত্যাগের ও আত্মশুদ্ধির। নবী (সা.) স্বাভাবিক পরিমাণে খাবার খেতেন। তিনি কখনই পেট ভরে পানাহার করতেন না। মিকদাম ইবনে মা‘দিকারিব (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘বনি আদমের জন্য তো এতটুকু খাবারই যথেষ্ট যার দ্বারা তার পিঠ সোজা থাকে। যদি এর চেয়ে বেশি খেতে হয়, তা হলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুন্নতসম্মতভাবে ইফতার করা ও করানোর তওফিক দান করুন। আমিন।

এসএন/তাজা/২০২২

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]