ভারতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মহামারি করোনার সংক্রমণ। চীন, ইউরোপ আমেরিকায় যখন মারাত্মকভাবে বিস্তার ছড়াচ্ছিল ভারতে তখন সংক্রমণ অতটা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ভাইরাসটির সংক্রমণ এই দেশটিতে এতটাই বাড়তে শুরু করেছে যে সাবধান না হলে আগামীতে হয়তো তা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
দেশটিতে প্রতিদিনই গড়ে দশ হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও ৯ হাজার ৯৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৮ জন।
করোনার প্রকোপ অনেক পরে শুরু হলেও ক্রমাগতই এতদিন আক্রান্তে শীর্ষে থাকা দেশগুলোকে টপকে যাচ্ছে ভারত। আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান এখন পঞ্চম। শুধু ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে যতজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে উৎপত্তিস্থল চীনেও তা হয়নি।
ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ হতে সময় নিয়েছিল ১১০ দিন। পরবর্তী ১ লাখ সংক্রমিত হয় মাত্র ১৫ দিনে। কিন্তু রোগ ছড়ানোর এখন যা গতি, তাতে মনে হচ্ছে এই সংখ্যাটা ২ থেকে ৩ লাখে পৌঁছাতে মোটে সপ্তাহখানের লাগতে পারে। দ্রুতগামী সংক্রমণ সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
সোমবার ভারতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে অথচ ওইদিন থেকে করোনা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার বহর কমানোর কারণে শুরু হয়েছে তথাকথিত ‘আনলক-১’। বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের কারণে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রায় পুরোটাই আবার সচল। মৃত্যুর সংখ্যাও রীতিমতো উদ্বেগের। প্রতিদিন তিন শতাধিকেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।
ভারতে করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাজ্য হলো মহারাষ্ট্র। আর মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বাজে অবস্থা দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত মুম্বাইয়ের। দেশটির অন্য অঞ্চলগুলোতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলেও শহরটিতে স্কুল, সিনেমা হল, শপিং মল, উপাসনালয় এবং অন্যান্য স্থানগুলো বন্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ভারতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮৯ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৪৬৬ জন মারা গেছে। তবে আক্রান্তদের ১ লাখ ২৯ হাজারের বেশি সুস্থ। এছাড়া হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ লাখ ৩০ হাজার সক্রিয় রোগী।
সাবধান না হলে আগামী দিনগুলো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) মহাপরিচালক ডা. রণদীপ গুলেরিয়া। এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, আগামী ২–৩ মাস খুবই কঠিন সময়। কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এই সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।