দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে ভারত। টেস্টে নিজেদের ইতিহাসে তারা প্রথমবার একাধিক তিক্ত স্বাদ পেয়েছে। কলকাতার পর গুয়াহাটিতেও টেম্বা বাভুমার দলের কাছে পাত্তা পায়নি পান্ত-রাহুল-বুমরাহরা। ইডেন গার্ডেনে মাত্র আড়াই দিনেই শেষ হয়েছিল ভারত-আফ্রিকার টেস্ট। গুয়াহাটিতে পঞ্চম দিনে খেলা গড়ালেও, নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪০৮ রানে হারল ভারত।
টেস্ট ক্রিকেটে রানের হিসাবে এর আগে ভারত সর্বোচ্চ ব্যবধানে হেরেছিল ২০০৪ সালে। নাগপুরে তারা অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩৪২ রানে হেরে যায়। জেসন গিলেস্পি এবং গ্লেন ম্যাকগ্রার বোলিংয়ের সামনে দুই ইনিংসেই (১৮৫ এবং ২০০) গুটিয়ে যায় রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকাররা। এর দুই বছর পর করাচিতে পাকিস্তানের কাছে ৩৪১ রানে হারে ভারত। পাকিস্তান ২৪৫ রান তোলার পর প্রথম ইনিংসে ভারত তোলে ২৩৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান তোলে রানপাহাড় (৫৯৯) গড়ার পর ভারত ২৬৫ রানে গুটিয়ে যায়।
সেই দুই হারকে ছাপিয়ে গেছে ঋষভ পান্তদের আজকের (বুধবার) হার। প্রোটিয়াদের দেওয়া ৫৪৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্য ছিল ভারতের সামনে। একদিন এক সেশন হাতে রেখে জয় নয়, বরং ড্র করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। অন্তত হোয়াইটওয়াশ এড়ানো যেত। শেষ দিন ৮ উইকেট ছিল তাদের হাতে। ২ উইকেটে ২৭ রানে আজ স্বাগতিকরা খেলা শুরু করে। ভারত ১৪০ রানে অলআউট হলে ৪০৮ রানে গুয়াহাটি টেস্ট জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ ছাড়া ভারতকে তাদেরই মাটিতে টেস্টে দু’বার হোয়াইটওয়াশ করার নজির নেই আর কোনো দলের। ২০০০ সালের পর এবার ২০২৫–এর সায়াহ্নে এসে ভারতকে দ্বিতীয়বার ধবলধোলাইয়ের স্বাদ দিলো আফ্রিকানরা। গতবারের মতো এবারও প্রোটিয়ারা তাদের মাটিতে টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হারাল। এ ছাড়া গত বছর ভারতকে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকে প্রায় ছিটকে দেয় নিউজিল্যান্ড। ঘরের মাঠে কেবল এই তিনবারই টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত, এর মধ্যে দু’বার প্রোটিয়াদের সঙ্গে।
একবিংশ শতাব্দিতে ঘরের মাঠে ভারত এখন পর্যন্ত চারটি টেস্ট সিরিজ হেরেছে। তবে অস্ট্রেলিয়া সঙ্গে ২০০৪ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালে পরাজিত সিরিজে তাদের ধবলধোলাই হতে হয়নি। ভারত যখন শোচনীয় পরাজয়ে ধুঁকছে, তেমনি মুদ্রার অপর পিঠে দাঁড়িয়ে টেস্টের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। গুয়াহাটিতে তারা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড গড়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ৪৯২ রানে।
আফ্রিকান অধিনায়ক হিসেবে হ্যান্সি ক্রনিয়ের পর ভারতকে তাদের দুর্গে ধবলধোলাইয়ের নজির গড়লেন বাভুমা। এখন পর্যন্ত ১২টি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাভুমা, এর মধ্যে ১১টিতেই জিতে তিনি ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। প্রথম ১২ টেস্টে সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডটা এখন তার দখলে। এর আগে বেন স্টোকস ও লিন্ডসে হাসেট প্রথম ১২ টেস্টে ১০ ম্যাচ জয়ের কীর্তি গড়েছিলেন। বাভুমার অবশিষ্ট ম্যাচটি অবশ্য বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়েছিল, ফলে সেটি ড্র হয়ে যায়।
এশিয়ায় দারুণ সময় কাটছে দক্ষিণ আফ্রিকার। গত বছর বাংলাদেশের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে জয়, চলতি বছর পাকিস্তানের মাটিতে ১-১ সমতা ও ভারতের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জিতল বাভুমার দল। অথচ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সিরিজের আগপর্যন্ত ১৩ টেস্টের ১০টিতেই হেরেছিল প্রোটিয়ারা। তাদের সাফল্য ছিল বাকি তিন ম্যাচ ড্র।
এদিকে, ঘরের মাঠে সিরিজ খেললেও এবার দুই টেস্টে কোনো সেঞ্চুরির দেখা পায়নি ভারতীয় ব্যাটাররা। এমনটা সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এর আগে সেই কিউইদের বিপক্ষে ১৯৬৯/৭০ সালে সেঞ্চুরিহীন টেস্ট সিরিজ খেলেছিল ভারত। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এবার দুই টেস্টে স্বাগতিক ব্যাটারদের গড় ছিল ১৫.২৩, যা ভারতের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০২/০৩ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ভারতীয় ব্যাটারদের সবচেয়ে কম গড় (১২.৪২) ছিল।