45319

11/25/2025 ২০ রেকর্ডের কারিগরকে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ

২০ রেকর্ডের কারিগরকে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক

২৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:২২

বাংলাদেশ সাঁতারের মিশরীয় কোচ সাঈদ ম্যাকডির অধ্যায় শেষ হচ্ছে। আগামীকাল (বুধবার) তিনি ঢাকা থেকে মিশরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। জানুয়ারি পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি থাকলেও দুই মাস আগেই চলে যাচ্ছেন।

সাঈদ আসার পর বাংলাদেশের সাঁতারুদের উন্নতি হয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সাঁতারে হয়েছিল বিশটি রেকর্ড। এত রেকর্ড সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি। সাঈদের ছোঁয়ায় বদলে গেছে চিত্র। সেই তার বিদায়কে দেশের সাঁতারের জন্য নেতিবাচক মনে করছেন সেরা পুরুষ সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি, ‘আমি থাইল্যান্ডে উন্নত ট্রেনিং করেছি বিশ্ব সাঁতারের বৃত্তিতে। সেখান থেকে দেশে আসার পর উনার ট্রেনিংয়ে আমার উন্নতি হয়েছে। তিনি অত্যন্ত ভালো মানের কোচ। শুধু আমার নয়, আরো সাঁতারুদের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। জাতীয় সাঁতারে বিশটি রেকর্ড কখনো আগে হয়নি, এটা তার জন্যই হয়েছিল। তিনি দীর্ঘমেয়াদে থাকলে সাঁতারের জন্যই ভালো হতো।’

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীনও সাঈদের বিদায়ে ব্যথিত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাঁতারের জন্য তার খুবই প্রয়োজন ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সাঁতারু ও বাংলাদেশি কোচদের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। প্রতি মাসে তার বেতন সাড়ে তিন হাজার ডলার ও খাবারের পেছনে আরো লাখ খানেক ব্যয়। অলিম্পিকের অর্থায়নে কয়েক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। খাবারের ব্যয় আমরা বহন করতাম। সামনে কোনো গেমস না থাকায় তাকে দীর্ঘমেয়াদে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য বাধ্য হয়েই তাকে বিদায় জানাতে হচ্ছে। যা সাঁতারের জন্য ক্ষতিই। কিন্তু আমাদের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই।’

মিশরীয় কোচ সাঈদ গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তার চুক্তি ছিল। এসএ গেমস অনিশ্চিত হওয়ায় ফেডারেশন ক্যাম্পও বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্প পরিচালনায় লাখ লাখ টাকা ব্যয়। তাই ফেডারেশন ডিসেম্বর মাসের বেতন দিয়ে সাঈদকে বিদায় করছে।

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে সাঈদ তার চার মাসের মূল্যায়ন করলেন এভাবে, ‘২০১৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সাঁতারুরা উন্নত ট্রেনিং সেভাবে পায়নি। আমার চার মাসের অনুশীলনে সাঁতারুদের টাইমিংয়ে উন্নতি হয়েছে। সেটার প্রমাণ ফলাফলেই। ফেডারেশনের প্রতি অনুরোধ যেন নিয়মিত অনুশীলন বজায় রাখে, না হলে চার মাসের উন্নতির ধারাবাহিকতা থাকবে না। বাংলাদেশের সাঁতারুদের সামর্থ্য ও যোগ্যতা রয়েছে, প্রয়োজন অনুশীলন ও ভালো কোচিং।’

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সিংহভাগ ডিসিপ্লিনই মূলত এসএ গেমসকেন্দ্রিক। সবার অপেক্ষা থাকে দক্ষিণ এশিয়ার গেমস নিয়ে। সেই গেমসের সময় ঠিক হলে চলে অনুশীলন, আবার স্থগিত হলে অনুশীলনও বন্ধ। গেমস অনিশ্চিত হওয়াটা বাংলাদেশের সাঁতারের জন্য ক্ষতিকর বলছেন সাধারণ সম্পাদক, ‘জানুয়ারিতে এসএ গেমস হলে আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল। এখন শোনা যাচ্ছে এটা নাকি ২০২৭ সালের শেষের দিকে হতে পারে। এত সময় আমাদের অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতি মাসে ক্যাম্প চালালে বিদ্যুৎ বিলই হয় ৫-৬ লাখ, আনুষাঙ্গিক আরো ব্যয় তো রয়েছেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও অলিম্পিকও আমাদের এত দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা করবে না। ফলে ক্যাম্প পরিচালনা করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

সাঁতার ফেডারেশনের বিগত কমিটি বিদেশি কোচ আনার ঘোষণা কয়েকবার দিলেও ব্যর্থ হয়েছে। অ্যাডহক কমিটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো মানের একজন বিদেশি কোচ এনেছে। নতুন কমিটির পরিকল্পনা এখন তরুণ সাঁতারুদের নিয়ে। মাহবুবুর রহমান শাহীন বললেন, ‘আমরা সম্প্রতি ট্যালেন্ট হান্ট করেছি। নতুন বছরের শুরুতে ৭০ জন ট্যালেন্ট হান্টের সাঁতারু ক্রীড়াপল্লিতে উঠবে। আমাদের সভাপতি অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এই সাঁতারুদের স্কুলে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। এই সাঁতারুরা মিরপুর কমপ্লেক্সে থেকে সাঁতার শিখবে ও একাডেমিক পড়াশোনা করবে। আমরা তাদের ভালো মানের সাঁতারু তৈরি করার চেষ্টা করব।’

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]