44418

10/20/2025 এআই অপপ্রচার ও ড্রোন ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা!

এআই অপপ্রচার ও ড্রোন ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:২৩

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সুসংহত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনটি প্রধান পর্যায়ে (তফসিল ঘোষণার পূর্বে, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী) কাজ করার নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে।

এছাড়া, নির্বাচনকালীন পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সংখ্যালঘু নিরাপত্তা, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সহযোগিতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তিনির্ভর ভুল তথ্য প্রচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৈঠকে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সার্বিক আইনশৃঙ্খলা কাঠামো, ৩ পর্যায়ের নিরাপত্তা কৌশল

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূলত তিনটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

তফসিল ঘোষণার পূর্বে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী ও নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ধাপে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত : অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। সকল প্রার্থীর নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ, ব্যাটালিয়ন আনসার, কোস্টগার্ড এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচন পরবর্তী কার্যক্রম : নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধে নির্বাচনের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বা ২ দিন পর্যন্ত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এই সময়ে আইনগত নির্দেশনা প্রদানের জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংক্ষিপ্ত বিচার কাজের জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।

প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম ও বিশেষ পদক্ষেপগুলো বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাই।

এছাড়াও, ইসি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে।

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা : তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ : নির্বাচনে সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পল্লী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদার/দফাদার নিয়োগের পাশাপাশি ইউপি সচিবদেরও সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা : সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অন্তর্ঘাতমূলক বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড রোধে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যবহারকারীদের দমনের লক্ষ্যে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

এআই নির্ভর ভুল তথ্য প্রচার রোধ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বা অন্য কোনোভাবে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচার রোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা : নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আগত পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তার জন্য সব প্রকার আইনানুগ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।

পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা : প্রবাসী ও পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্যদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পেপার নিরাপত্তার সঙ্গে ডাকবিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রেরণ এবং ফেরত আসার সময় নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।

সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা : In Aid to the Civil Power অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যেও ভোটকেন্দ্রে ও নির্বাচনি এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনসহ এ বিষয়ক বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ : নিরাপত্তার ঝুঁকি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং অননুমোদিত ব্যবহারের কারণে নির্বাচনি এলাকায় ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]