নম্রতা এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অন্যের কাছে প্রিয় ও মর্যাদাবান করে তোলে। বিনয়ী মানুষ নিজের অহংকার দমন করে অন্যকে সম্মান করেন এবং আল্লাহর কাছে নিজেকে প্রিয় করে তোলেন। ইসলামে বিনয় ও নম্রতার এই গুণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোরআনের দৃষ্টিতে বিনয় ও নম্রতা
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন,তুমি তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি সদয় হও। (সুরা শুআরা, আয়াত : ২১৫)
আল্লাহ আরও বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ ধর্ম থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাকে ভালোবাসবে। তারা হবে বিশ্বাসীদের প্রতি কোমল ও অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫৪)
মানব সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিনয়ের ভিত্তিতে সহাবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে এবং তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহভীরু। (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
আরও বলা হয়েছে, তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই ভালোভাবে জানেন কে আল্লাহভীরু। (সুরা নাজম, আয়াত : ৩২)
অহংকারীদের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে : আরাফবাসিগণ কিছু লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনে বলবে—তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার তোমাদের কোনো কাজে এল না... আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না—এই বলে শপথ করেছিলে, অথচ আজ তাদের বলা হচ্ছে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোনো ভয় নেই, তোমরা দুঃখিতও হবে না। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৪৮-৪৯)
হাদিসে বিনয়ের শিক্ষা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা পরস্পরে নম্র ব্যবহার কর, যাতে কেউ কারো প্রতি গর্ব না করে এবং কেউ কারো প্রতি অন্যায় না করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৩৮৯)
এই হাদিসের মাধ্যমে নবী করিম (সা.) স্পষ্ট করে দিয়েছেন—মুমিনের চরিত্রে অহংকারের কোনো স্থান নেই। নম্রতা এমন এক গুণ, যা সমাজে ভালোবাসা, ন্যায়বোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করে।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নম্রতা শুধু একটি নৈতিক গুণ নয়, বরং এটি ঈমানেরও অংশ। বিনয়ী ও সদয় আচরণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিকট প্রিয় হয়, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা পায় এবং মানবিক বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত—নিজেকে বিনয়ী রাখা, অহংকার ত্যাগ করা এবং সবার প্রতি সদয় আচরণ করা।