ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এস আলম গ্রুপের প্রভাব বিস্তার, অর্থ পাচার ও অবৈধ নিয়োগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হকস বে’র চেয়ারম্যান ও বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক।
বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং দেশের সেরা ব্যাংকের মর্যাদা অর্জন করে। প্রায় ৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে ব্যাংকটি।
তারা অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং বোর্ডের সদস্যদের বিতাড়িত করে নিজেদের অনুগত লোকদের নিয়োগ দেয়। এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারীকে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকের প্রতি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
বক্তারা আরও বলেন, এস আলম ব্যাংকের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিজের প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বাধা সৃষ্টি করে এবং বেনামে বিপুল অর্থ লোপাট করে কৃত্রিম ডলার সংকট তৈরি করে। এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারা দাবি করেন, এস আলম ও তার সহযোগীরা ইসলামী ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ তুলে নিয়েছে, যা ব্যাংকের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, এস আলম ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগকেও দুর্বল করে দেন। বিজ্ঞাপন বা পরীক্ষার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ৮ হাজার ৩৪০ জন অযোগ্য ও ভুয়া সার্টিফিকেটধারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাদের বেশিরভাগই পটিয়া ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা।
বক্তারা বলেন, এস আলমের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের কারণে বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে ব্যাংকের। সাত বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, ব্যাংকের এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লোপাট হয়েছে।
তারা আরও বলেন, এস আলম পালিয়ে যাওয়ার পরও মানবিক কারণে ইসলামী ব্যাংক অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ছাঁটাই করেনি। তবে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করে তারা ব্যাংকের প্রতি অবাধ্যতা দেখিয়েছে। এই কর্মকর্তাদের হাতে আড়াই কোটি গ্রাহকের আমানত নিরাপদ নয়।
বক্তারা আজকের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া সকল কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করার দাবি জানান। তা না হলে ব্যবসায়ী সমাজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলেও সতর্ক করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি জানানো হয়- অবিলম্বে এস আলমের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বহিষ্কার করতে হবে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে, ব্যাংকিং সেক্টরের লুটকৃত ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে, এস আলমের জব্দকৃত শেয়ার লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে হবে এবং পূর্বের পরিচালনা পর্ষদের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বারভিডার উপদেষ্টা ও নিউ অটো গ্যালারির প্রোপাইটর নজরুল ইসলাম আলম, শিল্পোদ্যোক্তা আল মামুন এবং ব্যবসায়ী মো. মুস্তাফিজুর রহমান।