বাণিজ্য চুক্তির কয়েক সপ্তাহ পরই হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে ট্রাম্প-শেহবাজের এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য ডন ও জিও নিউজ।
রয়টার্স বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বৈঠক এমন সময় হচ্ছে যখন কয়েক সপ্তাহ আগেই দুই দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের শাসনামলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকানোর কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল।
কিন্তু রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নানা কারণে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে— এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা জটিলতা, ভারতের পণ্যে ট্রাম্প আরোপিত উচ্চ শুল্ক এবং গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়ে ট্রাম্পের দাবি।
এর আগে গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করে। চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। তবে এখনো ভারতের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনের পর ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে তৈরি করতে চাইছে।
পৃথক প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বৈঠকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরও যোগ দিতে পারেন।
অন্যদিকে বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি প্রথম পাকিস্তানি সেনাপ্রধান হিসেবে হোয়াইট হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।
মূলত চলতি বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান ট্রাম্প। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এমন একান্ত বৈঠক ছিল সেটিই প্রথম, যেখানে কোনো শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই, অর্থনীতি ও বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে আলোচনা চলছে পাকিস্তানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এগিয়ে নিতে মনোযোগী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আর এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তিনি।”
ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প খোলাখুলি হতাশার কথা বলেন, তবে সম্পর্ক এখনও মজবুত। ওয়াশিংটন ভারতকে ভালো বন্ধু ও অংশীদার মনে করে। তিনি আরও জানান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কোয়াড সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে। ভারত নভেম্বরে এই সম্মেলন আয়োজনের কথা থাকলেও, সেটি না হলে আগামী বছরের শুরুতেই হবে।
এদিকে এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে পাকিস্তান। তবে ইসরায়েলের গাজা, কাতার ও ইরান আক্রমণের নিন্দাও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ইসরায়েলের গাজায় হামলার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র শান্তির প্রস্তাব ওই দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে শেয়ার করে।