43606

09/23/2025 ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে কতটি দেশ, দেয়নি কারা?

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে কতটি দেশ, দেয়নি কারা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৯

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের মাঝেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পর্তুগাল। রোববার পশ্চিমা বিশ্বের এই চার দেশের স্বীকৃতির পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও অন্যান্য কয়েকটি দেশও একই পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

১৯৮৮ সালে নির্বাসিত থাকাকালীন ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একতরফাভাবে ঘোষণা দেওয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘিরে বর্তমান কূটনৈতিক স্বীকৃতির চিত্র তুলে ধরা হলো।

ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যে ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে তার মধ্যে বর্তমানে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

• ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে কতটি দেশ?

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত ১৪৫টি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে।

এতে ব্রিটেন ও কানাডার নামও রয়েছে। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ এর সদস্য হিসেবে প্রথম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও মাল্টা শিগগিরই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফাঁকে এক বৈঠকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে।

আরব বিশ্বের সব দেশ, আফ্রিকান ও লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশ এবং ভারত, চীনসহ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় আলজেরিয়া।

পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে আরও বহু দেশ একই পথে হাঁটে। ২০১০ সালের শেষ দিকে এবং ২০১১ সালের শুরুতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বড় ঢেউ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলা এবং এর জেরে ইসরায়েলের গাজা অভিযান পরবর্তী সময়ে নতুন করে আরও ১৩টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

• স্বীকৃতি দেয়নি কতটি দেশ?

ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা-সহ অন্তত ৪৫টি দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। আফ্রিকায় ক্যামেরুন, লাতিন আমেরিকায় পানামা এবং ওশেনিয়ার বেশিরভাগ দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি ইস্যুতে সবচেয়ে বিভক্ত অঞ্চল হিসেবে রয়েছে ইউরোপ। এই মহাদেশের কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কিছু দেশ দেয়নি। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তুরস্ক ছাড়া কেবল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে বর্তমানে হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্রের মতো সাবেক পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি।

পশ্চিম ও উত্তর ইউরোপের দেশগুলো এতদিন একসঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার পক্ষে ছিল। তবে ২০১৪ সালে সুইডেন প্রথম পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।

কিন্তু গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতি উল্টে যায়। ২০২৪ সালে নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া সুইডেনের পথ অনুসরণ করে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর রোববার যুক্তরাজ্য ও পর্তুগালও একই পথে হাঁটে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে ইতালি ও জার্মানি।

• কূটনৈতিক ও আইনি জটিলতা

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের অ্যাইক্স-মার্সেইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিভাগের অধ্যাপক রোমাঁ লে বোফে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম জটিল প্রশ্ন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, স্বীকৃতির এই বিষয়টি রাজনৈতিক ও আইনি ক্ষেত্রের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা একটি বিন্দুর মতোই।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দেশ নিজেদের ইচ্ছামতো নির্ধারিত সময় ও প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতি দিতে পারে। এই স্বীকৃতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ—উভয়ভাবে হতে পারে।

লে বোফ বলেন, স্বীকৃতির নিবন্ধনের জন্য কোনও অফিস নেই। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীরে যে সব পদক্ষেপকে স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করে, তা তারা নিজেদের তালিকায় রাখে। তবে এটি একেবারেই বিষয়ভিত্তিক। অন্য দেশগুলোও বলতে পারে তারা স্বীকৃতি দিয়েছে বা দেয়নি। তবে এর জন্য কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, স্বীকৃতি দেওয়া মানে নতুন একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে, এমন নয়। আবার স্বীকৃতি না দেওয়া মানেই কোনও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই, এমনও নয়।

• প্রতীকী গুরুত্ব

স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তিন-চতুর্থাংশ দেশ মনে করছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে থাকার সব শর্ত পূরণ করেছে।

ফরাসি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস গত আগস্টে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে বলেন, অনেকের কাছে এটি প্রতীকী মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই প্রতীকই একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা। কারণ, একবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে সমানভাবে বিবেচনা করতে হবে।

সূত্র: এএফপি।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]