ইউরোপিয়ান ফুটবলে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ বড় সংকটে। গাজার গণহত্যার প্রেক্ষিতে চাপের মুখে উয়েফা ইসরায়েলকে সব ধরনের প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ভোট আয়োজন করতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর খবরে বলা হয়েছে, উয়েফার নির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসবে এবং সেখানে সিদ্ধান্ত হলে ইসরায়েল জাতীয় দলকে ইউরোপিয়ান কোয়ালিফায়ার থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। শুধু তাই নয়, মাকাবি তেল আবিবের মতো ক্লাবগুলোও ইউরোপা লিগ থেকে নিষিদ্ধ হতে পারে। এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রচারণা। খবরে আরও জানানো হয়েছে, উয়েফাকে ভোটে যেতে চাপ দিচ্ছে কাতার, যারা উয়েফার অন্যতম বড় অর্থায়নকারী।
বর্তমানে উয়েফার বোর্ড সদস্যদের বেশিরভাগই ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও অল্প কয়েকটি দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও ব্যাপক লবিং চালাচ্ছে যাতে বিষয়টি ভোটে না ওঠে।
ইসরায়েলি গণহত্যায় এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বহিষ্কারের দাবি জোরালো হয়েছে। অনেকেই একে তুলনা করছেন রাশিয়ার সঙ্গে, যারা ইউক্রেন আক্রমণের পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল। ফুটবল মাঠেও প্রতিবাদ দেখা গেছে। বিভিন্ন ম্যাচে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী ব্যানার উঠেছে। গত সেপ্টেম্বরে পিএসজি ও টটেনহ্যামের মধ্যে সুপার কাপ ফাইনালে উয়েফা নিজেই “Stop Killing Children, Stop Killing Civilians” লেখা ব্যানার প্রদর্শন করে।
তবে উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার সেফেরিন সেই সময় ব্যাখ্যা দেন, খেলোয়াড়দের তাদের সরকারের কাজের জন্য দায়ী করা উচিত নয়। একইসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, রাশিয়াকে তিন বছর নিষিদ্ধ রাখা হলেও ইউক্রেন যুদ্ধ থামেনি। ফরাসি কিংবদন্তি এরিক কান্তোনাও প্রকাশ্যে ইসরায়েল নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। তাঁর মতে, রাশিয়া এখনও ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিষিদ্ধ, ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
সম্প্রতি উয়েফা আরও সমালোচনার মুখে পড়ে গাজায় নিহত এক ফিলিস্তিনি ফুটবলারের ব্যাপারে তাদের অস্পষ্ট বিবৃতি নিয়ে। বিবৃতিতে মৃত্যুর কারণের কোনো উল্লেখ ছিল না। শুধু ফেডারেশন নয়, ইউরোপের কয়েকটি দেশও ইসরায়েলের বিপক্ষে খেলতে আপত্তি জানিয়েছে। ইতালি ও স্পেন এর মধ্যে রয়েছে। এদিকে, #GameOverIsrael নামে প্রচারণা চলছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের ফুটবল ফেডারেশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা ইসরায়েলি দলের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ইসরায়েলি খেলোয়াড়দের ঘরোয়া লিগ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়।
ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৮০০-এর বেশি ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। এর মধ্যে শুধু ফুটবলার নিহত হয়েছেন অন্তত ৪১২ জন। পাশাপাশি গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।