43019

09/13/2025 রানরেট নয়, জয় চায় বাংলাদেশ

রানরেট নয়, জয় চায় বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১১

এশিয়া কাপের মঞ্চে একের পর এক ম্যাচে শক্তিশালীরা জয় ছিনিয়ে নিচ্ছে। প্রথম তিন ম্যাচে কোনো অঘটন হয়নি, বাংলাদেশও সেই নিয়মেই জয় তুলে নিয়েছে নিজেদের প্রথম খেলায়। তবে জয় মানেই কি সব প্রশ্নের উত্তর? লিটন কুমার দাসের দল যদিও হংকংকে হারিয়েছে, তবু তাদের খেলার ভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের ব্যাটাররা যেখানে আগ্রাসন দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তান যেখানে ঝড় তুলে ম্যাচ শেষ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের জয়টা যেন খানিকটা নিরাপদে হাঁটার গল্প।

আজ রাত সাড়ে ৮টায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামছেন টাইগাররা। এই ম্যাচের আগে আগ্রাসনের বিষয়টি অবশ্যই সামনে আসবে। অন্তত ২০ ওভারের ক্রিকেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে আগ্রাসন ছাড়া জয় পাওয়া সম্ভব না। তাওহীদ হৃদয় অবশ্য স্পষ্ট ভাষায় বলছেন- রানরেট যেমন হোক, জয়ই আসল কথা। রানরেট, দর্শন বা আগ্রাসন নয়, ম্যাচ শেষে কেবল জয়টাই মনে রাখা হয়। তার মতে, 'দিনশেষে ম্যাচের রেজাল্টটাই ইম্পর্ট্যান্ট। আমরা যদি না জিততাম, তাহলে সকলের প্রশ্ন আরও কঠিন হতো'-এমন সোজাসাপ্টা কথাতেই ফুটে ওঠে বাংলাদেশের বর্তমান মানসিকতা।

তবে এই মানসিকতার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক ধরনের দ্বিধা। দল যেন এখনো বোঝার চেষ্টা করছে, তারা কি প্রতিপক্ষকে দাপটে হারানোর শক্তি রাখে, নাকি ধীর-স্থির ক্রিকেট খেলে ফলের নিশ্চয়তায় ভরসা করবে। হংকংয়ের বিপক্ষে জয় হলেও ব্যাটিংয়ের গতি ছিল না ঝড়ো, রানরেটের চাপে কাঁপা কণ্ঠ শোনা গেছে বিশ্লেষণে।

হৃদয় নিজেও স্বীকার করেছেন সম্প্রতি বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। কয়েকটি ম্যাচে ৩০ রানে থেমে যাওয়ার হতাশা তার কণ্ঠে স্পষ্ট। তবুও তিনি হাল ছাড়ছেন না-প্রতিটি ইনিংসকে নতুন শুরুর মতো ভাবতে চান। 'চাপ নিয়ে নামলে শরীর সাড়া দেবে না'-এই ব্যাটারের এমন উপলব্ধি আসলে মানসিক পরিপক্কতার প্রতিচ্ছবি। তবে একইসঙ্গে এটি জানান দিচ্ছে, তিনি এখনো শট নির্বাচনের বৈচিত্র্য কিংবা খেলার মেজাজে খুঁজছেন নিজের স্থিতি। প্রতিপক্ষরা তার ব্যাটিং বিশ্লেষণ করে ফেলছে, বোলাররা জানে তিনি কোথায় দুর্বল- এমন সময় তাকে নিজের খেলায় নতুনত্ব আনতেই হবে। হানিমুন পিরিয়ড পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ দিকে সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ বারবার টস জিতে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের ভেতরে এটি ছিল সম্মিলিত পরিকল্পনা। যুক্তি একটাই-প্রতিপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব অলআউট করে ম্যাচ জেতা, আর নেট রানরেট সামলানো। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এই কৌশল সব সময় সফল হয়নি। বরং মাঝেমধ্যে ব্যাটিং অস্থিরতায় দল হোঁচট খেয়েছে। হৃদয় বলছেন, 'আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছি।'

তবে মাঠের সত্যি হলো- শেষের ওভারগুলোয় বাংলাদেশি ব্যাটাররা বারবার থেমে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের মতো দল যেখানে শেষ ১০ ওভারে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়, সেখানে বাংলাদেশ এখনো খুঁজে ফিরছে কার্যকর সমাধান। হৃদয়ের কথায় যেমন আত্মবিশ্বাস, তেমনই ফুটে ওঠে দ্বিধা। বাংলাদেশ জিততে চায়, কিন্তু প্রতিপক্ষকে শাসন করার মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি। জয়টা হচ্ছে, তবে জয়টি নিরাপদ খেলার কৌশলে, নাকি দাপট দেখিয়ে? টি-টোয়েন্টি সেটিই আলাদা করেন দর্শক। আর বড় আসরে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হলে প্রয়োজন দ্বিতীয় মানসিকতা- প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা, নিঃশ্বাস নিতে না দেওয়া।

এশিয়া কাপে জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এখন চোখ শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠিন লড়াইয়ের দিকে। হৃদয়ের আত্মবিশ্বাস অবশ্য আশার আলো দেখায়। কিন্তু ক্রিকেটের মাঠে কথা বলবে কেবল পারফরম্যান্স। জয় যদি শেষ লক্ষ্য হয়, তবে দাপট হবে তার সবচেয়ে সুন্দর অলঙ্কার।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]