১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অপ্রত্যাশিতভাবে শেখ মুজিবসহ গোটা পরিবার হত্যা করা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এক মহাসংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। দেশের প্রতিটি সেক্টরে দেখা দিয়েছিল নানান সমস্যা, অরাজকতা।
১৯৭৭ সালে দেশের জনগণের জন্য মহা শান্তির বার্তা নিয়ে আসেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দেশের মানুষের মনে অর্থনীতি মুক্তি, শান্তি, শৃঙ্খলা ফিরে আসে। দেশে গড়ে ওঠে শিল্প কারখানা। জনগণের বেকারত্ব সমস্যা দূর হয়। খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ে। দেশ ও জনগণ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে।
পরবর্তী ১৯৭৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএনপি দলটি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী উদারপন্থী বহুমতের গণতন্ত্রকামী মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরতাত প্রতীক হয়ে ওঠে এই দল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং বিএনপির নেতৃত্বে দেশে খাদ্য ঘাটতি দূর হয়, তৈরি পোশাকের ব্যাপক মার্কেট সৃষ্টি হয়।
সুনামের সাথে বিদেশে ম্যানপাওয়ার পাঠানো রেমিট্যান্স আসে, কৃষি বিপ্লব হয়, খাল খনন ইরিগ্যাশনের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির জন্য ফসলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। দেশ ও জনগণের মধ্যে সুখের সুবাতাস বইতে থাকে। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে আবার স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের উত্থান ঘটে। দীর্ঘ ৯ বছর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা হয়। এ সংকটেও বিএনপি নেতৃত্ব দেয়। ৯ বছর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয় এবং ১৯৯১ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয় এবং জনগণের ভোটে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে। দেশে আবার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংকটে বিএনপির মাধ্যমে দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক সরকারের সুবিধা ভোগ করে।
১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আবারও গলা টিপে হত্যা করা হয় সেই সময়। ২০০১ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে ২০০৭ সালে গণতন্ত্রের ওপর আবারও খড়্গ নেমে আসে। সেনাবাহিনীর মদদে মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের ভোটে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে পুনরায় একদলীয় বাকশালী ব্যবস্থা স্থায়ী করে গণতন্ত্র গলা টিপে হত্যা করে।
দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরে দেওয়ার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে। দেশের বহু মানুষ গুমের শিকার হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ বিরোধী মতের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর শত শত মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়।
হত্যা, গুমসহ সব ধরনের নির্যাতন করা হয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয় বছরের পর বছর। বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপরও চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। দেওয়া শত শত মিথ্যা মামলা।
বিএনপি ভেঙে ফেলার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সব ধরনের চেষ্টা চালায়, পাশাপাশি সব ধরনের নির্যাতন জিয়া পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয়। সর্বশেষ ৫ আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব নেয়। তারা অল্প সময়ে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের আয়োজন করবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণ তার পছন্দের ভোটাধিকার ফিরে পাবে দীর্ঘ ১৭ বছর পর। জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বিএনপিই সরকার গঠন করবে। জনগণও ভাবছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপিই রাষ্ট্রের এ ক্রান্তিলগ্নে দেশ ও জনগণের সংকট থেকে রক্ষা করতে পারবে।
সর্দার এম জাহাঙ্গীর হোসেন : সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক (চীন); বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি