কম দামে বেশি পেঁয়াজ দেওয়ার আশ্বাসে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাধানগর পয়েন্টের একটি আড়ত থেকে শাহিনুর আলম (৪২) একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
আটককৃত শাহিনুর আলম সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পাখিজান গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সরেজমিনে জানা যায়, গত চার মাস ধরে ‘মেসার্স আব্দুল্লাহ বাণিজ্যালয়’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে প্রতারণার জাল বিস্তার করে চক্রটি। ব্যবসাটি পরিচালনা করতেন জব্বার, রফিকুল ইসলাম, মাসুদ ও শাহিনুর নামের পাঁচজন। ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জনের জন্য রফিকুল ইসলামকে নিজের খালাতো ভাই পরিচয় দিতেন শাহিনুর। পাশাপাশি নিজেদের বড় ব্যবসায়ী প্রমাণ করতে তারা বিশ্বম্ভরপুরের পলাশ বাজারে দুটি এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাধানগর পয়েন্টে একটি আড়ত ভাড়া নেন।
গতকাল রোববার (২৪ আগস্ট) জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তারা। সোমবার সকালে ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য নিতে এসে দেখেন তাদের সব মোবাইল নম্বর বন্ধ। পরে রাধানগর পয়েন্টের আড়তে ব্যবসায়ীরা শাহিনুরকে চাপ দিলে তিনি জানান—টাকা তিনি নেননি, অন্যরা নিয়েছে।
ভাই ভাই স্টোরের মালিক ও পলাশ বাজারের ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বলেন, শাহিন ভাইয়ের মাধ্যমে আমি তাদের চিনি। তিনি রফিকুলকে খালাতো ভাই এবং গাজীপুরের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা আমার কাছ থেকে রসুন নিয়েছে এবং বদলে পেঁয়াজ দেওয়ার কথা ছিল। গতকাল এলসি পেঁয়াজ দেওয়ার নামে আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা ও ৪০ বস্তা রসুন নেয়। আজ পেঁয়াজ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৮ লাখ টাকা নিয়ে তারা উধাও হয়ে গেছে।
একইভাবে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি গ্রামের মৃত শাহারুখ চৌধুরীর ছেলে তৈমুর চৌধুরী সুহেল বলেন, শাহিনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তারা বলেছিল আমাকে ব্যবসার অংশীদার করবে। তাদের রাধানগর ও পলাশের বড় আড়ত দেখে আমি লেনদেন শুরু করি। গতকাল ২২ লাখ টাকা দিয়েছি পেঁয়াজের জন্য। কিন্তু আজ সকাল থেকে তাদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না।
এদিকে আটককৃত শাহিনুর আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসার চালাতাম। রফিকুল সুনামগঞ্জে ঘুরতে এলে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা আমাকে জানায় ব্যবসা করতে চায় এবং বিভিন্ন প্রলোভন দেখালে আমি রাজি হয়ে যাই। আমি শুধু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছি। তাদের আসল পরিচয় জানি না, শুধু শুনেছি তারা গাজীপুরের বড় ব্যবসায়ী। এখন তাদের ফোন বন্ধ, কোথায় আছে আমি জানি না।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অভিজিৎ ভৌমিক বলেন,
কম দামে পেঁয়াজ-রসুন দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। অভিযুক্ত শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এসএন/রুপা