নতুন প্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি রাশেদ (২৪)। ছেলের মুখ দেখার স্বপ্ন ছিল চোখে। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে সেই আনন্দ উদ্যাপনের পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দিল না। সন্তানের জন্মের মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নির্মাণাধীন ভবনের ৯তলা থেকে পড়ে চিরতরে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন রাশেদ।
বেদনাদায়ক এ ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের চরলাঙ্গলিয়া গ্রামে। জীবিকার তাগিদে রাশেদ চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি এলাকায় একটি নির্মাণকাজে নিযুক্ত ছিলেন। গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে কাজ করার সময় তিনি ৯তলা ভবন থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই দুর্ঘটনায় সুবর্ণচরের আরও দুই নির্মাণশ্রমিকেরও মৃত্যু হয়।
রাশেদের মৃত্যুর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর, শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এর আগেও দম্পতির একটি চার বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাশেদ দীর্ঘদিন ধরে আশা করেছিলেন—ছেলে হলে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবেন, আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। সেই স্বপ্নের কথা স্ত্রীকে অনেকবার বলেছিলেন তিনি। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, সেই ছেলের মুখ দেখার আগেই চিরবিদায় নিতে হলো তাকে।
চরলাঙ্গলিয়া গ্রামের রাশেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক শোকাহত পরিবেশে নবজাতককে কোলে নিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছেন তার মা। পাশে চুপচাপ বসে আছে রাশেদের চার বছরের মেয়েটি। বাবাকে হারানোর বোঝা সে বুঝে না, কিন্তু চারপাশের ভারী পরিবেশে তার চোখও ছলছল। পরিবারের সবাই যেন বোবা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সন্তানের জন্মের আনন্দ আর প্রিয়জন হারানোর শোক—এই দুই বিপরীত অনুভূতির এক অসহনীয় দ্বন্দ্বে নুয়ে পড়েছে রাশেদের পরিবার।
রাশেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে শনিবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে। তার স্ত্রীর চোখে এখন শুধু প্রশ্ন—এই দুই সন্তানকে কীভাবে বড় করব?
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, এমন দৃশ্য জীবনে প্রথম দেখলাম। একদিকে নতুন প্রাণের আগমন, অন্যদিকে সেই প্রাণের জন্মদাতার চিরবিদায়। এই যন্ত্রণার ভাষা নেই।
চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন, রাশেদ অত্যন্ত পরিশ্রমী, ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। তার অকাল মৃত্যু শুধু তার পরিবারের নয়, আমাদের গ্রামেরও অপূরণীয় ক্ষতি। একই ঘরে একদিকে সন্তানের জন্ম, অন্যদিকে বাবার জানাজা—এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আমরা আগে দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, পরিবারটি যাতে সরকারি সহায়তা পায়, সেই লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
এসএন /সীমা