নওগাঁয় নিজ বাড়িতে মাকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্তানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই মায়ের নাম বিলকিস আক্তার (৬২)।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে তিনি মেয়ের বাড়ি থেকে শহরের কাজীর মোড় এলাকায় অবস্থিত নিজ বাড়িতে এলে তার ছেলে তাকে প্রবেশে বাধা দেন এবং সিড়ির গেটে তালা লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওই মায়ের। অভিযুক্ত সন্তানের নাম জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ।
ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বিকেলে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা ওই বাড়িতে যায়। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চালকালীন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের সামনেই দু'পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে আলোচনার জন্য দু'পক্ষকেই থানায় নিয়ে যায়।
এ সময় ভুক্তভোগী ওই মা বিলকিস আক্তার গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি এই বাড়িতেই থাকতাম। আমার ছোট মেয়ে দেশে আসার পর আমি তার বাড়িতে মাঝেমধ্যেই থাকি। এরপরে আমি যখন আমার বাড়িতে আসি তখন আমাকে সে প্রবেশে বাধা দেয়। এই বাড়ি আমার স্বামীর নামে রয়েছে। সে মারা যাওয়ার পরে এই বাড়ির ওয়ারিশ আমরা সকলে। কিন্তু আমার ছেলে এই বাড়ি একাই দখলে নিয়ে আমাদের কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আজকে সকাল ১০টার দিকে আমি আমার মেয়ের বাড়ি থেকে এই বাড়িতে আসি। আমার ছেলে তখন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন সে ওপরে ওঠার সিড়ির গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। আমি বার বার ওপরে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলেও সে আমাকে গেট খুলে দেয় না। আমি সিড়ির পাশেই বসে ছিলাম।
বিলকিস আক্তার কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, এই বাড়ি তো তার একার না, এই বাড়িতে আমার মেয়েদেরও অংশ রয়েছে। তাহলে কীভাবে সে আমাকে প্রবেশে বাধা দিতে পারে। আমি আমার বাড়িতে থাকতে চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই মায়ের ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ বলেন, বাবা-মারা যাওয়ার পর আমার বোন ও ভগ্নিপতি মিলে যোগসাজশ করে আমার মাকে কৌশলে তাদের বাসায় নিয়ে রাখেন। নওগাঁ শহরে আমাদের একাধিক আবাসিক ভবন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই আবাসিক ভবন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ভাড়া আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন আমার মা। কিন্তু আমার মা ভগ্নিপতির বাসায় যাওয়ার পর থেকে কোনো কারণে ভাড়ার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। গত ২৮ মাসের ভাড়ার হিসেবে প্রায় দেড় কোটি টাকা আমার মায়ের কাছে জমা রয়েছে। আমি টাকা চাইতে গেলে ভগ্নিপতির কু-পরামর্শে এবং অসৎ উদ্দেশ্যে মাকে বাদী করে আমার নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেয়। ওই মামলায় আমাকে ২১ দিন জেল খাটতে হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এই সম্পত্তি যেহেতু এখন কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে কোর্ট থেকে কোন আদেশ না আসা পর্যন্ত আমি এই বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দেব না। এখন এই বড়িতে কেউ প্রবেশ করলে আমার জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। আবারও তারা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার দেব বলেন, এই ঘটনায় মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। ওই নারীকে তার ছেলে সকাল থেকে তার নিজ বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তিনি আজকে রোজা আছেন। আমি তার ছেলে সৌরভের সঙ্গে কথা বলেছি। সৌরভ জানিয়েছে আদলত থেকে রায় না আসা পর্যন্ত তার মা কে সে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না। এখনও এই বাড়ির একক মালিকানা তার নেই। সে কোনোভাবেই এই কাজ করতে পারে না।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি জানার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তাদেরকে বলছি অভিযোগ দায়েরের জন্য। লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএম /সীমা