সুপারশপ বা বাজারে ইদানিং অনেক নতুন রঙিন পানীয়ের দেখা যায়। যাকে বলে আপেল সাইডার। দেখতে গাঢ় সোনালি, সামান্য ঘোলা আর সুগন্ধি এই পানীয় আমাদের দেশে এখন আর নতুন নয়।
তবে অনেকেই জানেন না, অ্যাপল সাইডার আর আপেলের জুস এক নয়। আবার ‘হার্ড সাইডার’ এবং আপেল সাইডার-ও আলাদা।
আপেল সাইডার আসলে কী, কীভাবে তৈরি হয়, আপেলের জুস থেকে এর পার্থক্য কোথায়, ‘হার্ড সাইডার’ কেমন, এবং এই সাইডার গরমে না ঠাণ্ডায় খাওয়া ভালো?
এ বিষয়গুলো না জেনেই অনেকে তিন ধরনের পানীয় খাদ্যতালিকায় যোগ করেন। এতে কি স্বাস্থ্যক্ষতি আছে?
আপেল সাইডার কী?
আপেল সাইডার হচ্ছে তাজা আপেল চিপে তৈরি করা এক ধরনের পানীয়। এটি সাধারণত ঘোলা এবং গাঢ় রংয়ের হয়, কারণ এটি ছেঁকে পরিষ্কার করা হয় না।
এই তথ্য জানিয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাদ্য-বিষয়ক মার্কিন লেখক মেলিসা ক্রাভিজ হফনার আরও বলেন, আপেল খোসা ছাড়ানো ও ফালি করার পর যেভাবে রং বদলে যায়, সাইডারেও এমনটা ঘটে অক্সিডেইশনের কারণে। অনেকে এটিকে ঝাঁজালো ও খাঁটি স্বাদের জন্য পছন্দ করেন।
এটি তৈরি করা হয় কাঁচা আপেল চিপে। কিছু ক্ষেত্রে এটি পাস্তুরিত করা হয়, অর্থাৎ নিরাপদে পান করার জন্য জীবাণুমুক্ত করা হয়।
তবে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) অ্যাপল সাইডার বা আপেলের জুস— কোনোটির ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক পাস্তুরিত করার নিয়ম দেয়নি।
আপেলের জুস বনাম অ্যাপল সাইডার
অনেকে ভাবেন, আপেল সাইডার এবং আপেলের জুস একই জিনিস। আসলে তা নয়।
আপেল সাইডার হচ্ছে সম্পূর্ণ কাঁচা ও প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুতকৃত, যেখানে কোনো অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম উপাদান থাকে না (তবে মসলা বা প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান থাকতে পারে)।
অন্যদিকে, আপেলের জুস তৈরি হয় রান্না করা আপেল থেকে। এটিকে ছেঁকে পরিষ্কার করা হয় এবং সাধারণত পাস্তুরিত করা হয় যাতে স্বাদ হয় মোলায়েম ও মিষ্টি।
আপেল সাইডার কিন্তু ভিনেগার নয়
অনেকে আপেল সাইডার শুনে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ভেবে ভুল করেন। তবে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।
আপেল সাইডারকে প্রথমে একবার গাঁজন বা পচন প্রক্রিয়া (ফার্মেন্টেইশন) করে ‘হার্ড সাইডার’ তৈরি করা হয়।
এরপর দ্বিতীয় দফায় গাঁজন করে তৈরি হয় অ্যাপল সাইডার ভিনেগার। এতে থাকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড- যা রান্না, ত্বক ও চুলের যত্ন এবং পরিষ্কারে ব্যবহার হয়।
হার্ড সাইডার: আপেল সাইডারের মদ্যপ সংস্করণ
আপেল সাইডার স্বাভাবিক ও নন-অ্যালকোহলিক। তবে ‘হার্ড সাইডার’ হচ্ছে এর অ্যালকোহলযুক্ত সংস্করণ।
এতে ইস্ট বা খামির যোগ করে ফারমেন্টেইশন করা হয়, ফলে অ্যালকোহল তৈরি হয়।
এটি সাধারণত বোতল বা ক্যানের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি হয়। আর এটি পানের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হতে হয়।
‘হার্ড সাইডার’ শুধু আপেল থেকেই নয়, অনেক সময় নাশপাতিও ব্যবহার করা হয়।
‘হার্ড সাইডার’য়ে অ্যালকোহলের পরিমাণ ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ১২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ঠিক যেমন হয় ওয়াইনে। এতে বিভিন্ন স্বাদের বৈচিত্র্য আনা যায়, যেমন- মিষ্টি, শুকনা বা ঝাঁঝালো স্বাদ।
সাইডার গরমে না ঠাণ্ডায়?
চাইলে আপেল সাইডার ঠাণ্ডা বা গরম— যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই পান করা যায়। অনেকেই ফ্রিজ থেকে বের করে বরফ দিয়ে পান করেন, আবার কেউ গরম করে দারুচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে ফোটান।
যাদের পাস্তুরিত সাইডার নিয়ে সন্দেহ আছে, তারা এটিকে অন্তত ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে গরম করে পান করতে পারেন, এতে জীবাণু মারা যায়।
যেভাবে তৈরি করতে হয় উষ্ণ অ্যাপল সাইডার
চাইলে বাড়িতে সহজেই তৈরি করা যায় উষ্ণ আপেল সাইডার।
যা যা লাগবে:
১ গ্যালন অ্যাপল সাইডার বা তাজা আপেল
২-৩টি দারুচিনি টুকরা
১ চা-চামচ গোটা লবঙ্গ
১টি কমলা টুকরা করা
বাদামি চিনি বা মেপল সিরাপ (ঐচ্ছিক)
ধাপ ১: আপেল তৈরি (যদি কাঁচা আপেল ব্যবহার করা হয়)
বিভিন্ন রকমের আপেল ব্যবহার করলে স্বাদ আরও ভালো হয়। আপেল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। খোসা ছাড়ানোর দরকার নেই, শুধু ডাঁটা ও বীজ ফেলে দিন।
তারপর টুকরা করে পানিতে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। মাঝারি আঁচে দু-তিন ঘণ্টা সেদ্ধ করার পর চামচ বা ‘ম্যাশার’ দিয়ে চেপে নিন। এরপর ছেঁকে রস বের করতে হবে।
ধাপ ২: মসলা ও রস একত্র করা
এই রস বা দোকান থেকে আনা অ্যাপল সাইডার একটি বড় পাতিলে ঢেলে দারুচিনি, লবঙ্গ ও কমলার টুকরা দিতে হবে। চাইলে এর সঙ্গে তারকা মৌরি বা লেবুর রস যোগ করা যায়। মাঝারি আঁচে গরম করতে হবে আবার।
ধাপ ৩: ফুটিয়ে পরিবেশন
২০ থেকে ৩০ মিনিট ধীর আঁচে ফুটানোর পর চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এই সময় মসলা ও কমলা ফেলেও দেওয়া যায়, আবার রেখে দিলেও সমস্যা নেই।
মগে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করা যায়। ওপরে একটি দারুচিনি বা কমলার টুকরা সাজানো যেতে পারে।
ডিএম /সীমা