যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক পিকনিকে বাজেট বিলে স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিলটিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা এখন আইনে পরিণত হয়েছে। এতে ধনীদের জন্য বড় অঙ্কের কর ছাড়ের পাশাপাশি কম আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট এসেছে। একই সঙ্গে নজিরবিহীন হারে বেড়েছে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্বাক্ষরের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘এটা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিল। আমরা সবকিছু একসঙ্গে একটি বিলে ঢুকিয়েছি। আমরা আগে কখনো এমন কিছু দেখিনি।’
বিলটি পাশ হওয়ার আগের দিন আইওয়া অঙ্গরাজ্যে এক জনসভায় ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যা কিছু নেতিবাচক বলছে, সবই ধোঁকাবাজি। এটা আমেরিকার জন্মদিনের উপহার।’
দীর্ঘ আলোচনার পর বিলটি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাশ হয়। পরে নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে এটি ২১৯-২১৩ ভোটে পাশ হয়। মাত্র দুজন রিপাবলিকান বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থীদের বহুদিনের দাবি পূরণের সুযোগ তৈরি করেছে।
আইন অনুযায়ী, বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টিপস, অতিরিক্ত সময়ের মজুরি এবং গাড়ি ঋণের সুদের ওপর অস্থায়ী কর অব্যাহতি। তবে গবেষণা সংস্থা সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিজ বলছে, কর ছাড়ের বড় সুবিধা পাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে ধনী শ্রেণি। যদিও ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘এই বিল কার্যকর হলে আমাদের দেশের অর্থনীতি রকেটের গতিতে এগোবে।’
অন্যদিকে, কম আয়ের ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি মেডিকেইড এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্ন্যাপে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গবেষকদের হিসাবে, এতে ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন এবং ৮০ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবেন। ডেমোক্র্যাট সিনেটর রাফায়েল ওয়ারনক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা প্রকাশ্য ডাকাতি। রিপাবলিকানরা গরিবদের পকেট কেটে ধনীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।’
আইনে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ১৭০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এতে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গণ-বহিষ্কার’ কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। অভিবাসন অধিকারকর্মী নিকোল মেলাকু বলেন, ‘এই বাজেট ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে অবাধ অর্থ তুলে দিচ্ছে, যাতে তারা অভিবাসীদের ভয় দেখাতে পারে, পরিবারগুলোকে আলাদা করতে পারে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, অপরাধের রেকর্ড না থাকা অভিবাসীদেরও সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যদিও কৃষি ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে কিছু সময়ের জন্য খামার, রেস্তোরাঁ ও হোটেলে অভিযান বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, যেসব খামার মালিক ব্যক্তিগতভাবে শ্রমিকদের দায় নিতে পারবেন, সেখানে অভিযান শিথিল করা হবে।
এ ছাড়া, এই বাজেটের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া সবুজ শক্তির বিভিন্ন প্রকল্পও বাতিল করা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা লাগবে।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, বাজেটটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে। কংগ্রেসের বাজেট অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩৪ সালের মধ্যে এই বিলের কারণে জাতীয় ঋণ ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের নিজ দলের ভেতর থেকেই বিরোধিতা শুরু হয়েছে।
এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি বলেন, ‘এই বিলের কারণে বাজেট ঘাটতি বাড়বে, যা দেশের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের চাপে ফেলবে।’ ডানপন্থী ধনকুবের ইলন মাস্কও বিলটির বিরোধিতা করেছেন। কংগ্রেসে ভোটের আগেই তিনি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের বিরুদ্ধে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আহ্বান জানান।
এসএন /সীমা