38073

07/02/2025 মহররম ও আশুরার সঙ্গে কারবালার সম্পর্ক কি?

মহররম ও আশুরার সঙ্গে কারবালার সম্পর্ক কি?

ধর্ম ডেস্ক

১ জুলাই ২০২৫ ১৭:৪১

রাসুল (সা.) উম্মতকে মহররম বা আশুরার রোজা রাখার কথা বলেছেন। এ কথার পক্ষে একাধিক সহিহ বর্ণনা হাদিসের কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন মুসনাদে আহমদের ২১৫৪ নং হাদিসে বলা হয়েছে- ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল যেন না হয় সেজন্য মহররমের ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রাখ।’

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা। আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ’ (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)

এই আশুরার দিনেই আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করার জন্য সৃষ্টির সূচনা করেন। তিনি এই দিনেই প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর মধ্যে রুহ প্রবেশ করান। এ ছাড়া আশুরার দিন যে উল্লেখযোগ্য ইতিহাসের স্মৃতি বহন করছে, তার অন্যতম হলো-এই দিনে হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়াকে (আ.) পৃথিবীতে পাঠানো হয়। এরপর সাড়ে তিনশ বছর কান্নাকাটি শেষে এই দিনেই হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উসিলায় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। হজরত ইবরাহিমকে (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা এবং হজরত ইউনুসকে (আ.) মাছের পেট থেকে উদ্ধারের ঘটনাও এই আশুরার দিনে ঘটে।

হজরত সুলায়মান (আ.) তার হারানো রাজত্ব ফেরত পান এবং হজরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘকাল রোগ ভোগের পর সুস্থ হন এই আশুরার দিনেই। এ ছাড়া এই দিনে হজরত ইউসুফ (আ.) চল্লিশ বছর পর বাবা হজরত ইয়াকুবের (আ.) সাক্ষাৎ পান এবং ফেরাউনের হাত থেকে হজরত মুসা (আ.) ও তার জাতিকে আল্লাহ রক্ষা করেন। এই দিনেই ফেরাউন লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায় এবং হজরত নূহ (আ.) মহাপ্লাবন শেষে আল্লাহর নির্দেশে জাহাজ থেকে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আশুরার ইতিহাসে গৌরবের সর্বশেষ পালক কারবালার ঘটনা। রাসুলের (সা.) ইন্তেকালের অর্ধ শতাব্দি পর ৬১ হিজরি ১০ মহররম, কারবালার বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। হজরত হুসাইন (রা.) এ দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে অসত্য, অসুন্দর, অন্যায় ও অকল্যাণের বিরুদ্ধে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের জন্য আত্মোৎসর্গ করে অনন্তকালের জন্য আদর্শিক শিক্ষা এবং শক্তির ওপর সত্যের বিজয়ের চেতনা জাগ্রত করেন।

সেদিন ইয়াজিদের বাহিনী প্রিয় নবীর (সা.) কলিজার টুকরা হজরত হোসাইন (রা.) ও তার সাথীদের সঙ্গে যে নিষ্টুর নির্মমতা দেখিয়েছে তাকে ঐতিহাসিকরা এ পর্যন্ত দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া সব বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের মধ্যে সবচেয়ে করুণ হত্যাযজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন।

কারবালার ময়দানে হজরত হোসাইন ইবনে আলী (রা.) শাহাদাতের পর তার দেহ মোবারকে মোট ৩৩টি বর্শা এবং ৩৪টি তরবারির আঘাত ছাড়াও অসংখ্য তীরের আঘাত দেখা যায়। যার বিবরণ শুনেই পাথরসম হৃদয়ের যেকোনো মানুষও হু হু করে কেঁদে ওঠে। কারবালা মুসলিম উম্মাহর চেতনা। অসত্য ও অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়ানের প্রেরণা।

আমাদের দেশের ওয়াজ, বয়ান, মাহফিল, মজলিসগুলোতে আশুরার ব্যাপারে রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হাদিসগুলো ও সামগ্রিক ইতিহাসের আলোচনা হয় না। তাই মানুষ মনে করে আশুরা বা মহররম মানে শুধুই কারবালা ও হজরত হোসাইন (রা.) এর শাহাদাত।

আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের দাবি। কিন্তু আমাদের মাহফিলগুলোতে যদি শুধু কারবালার আলোচনা হয় তাহলে মহররমের আমলগুলো হারিয়ে যাবে। নবীজির হাদিসগুলো ঢাকা পড়ে যাবে। মহররম মাসে যেহেতু কারবালার ঘটনা ঘটেছে তাই মহরম ও আশুরার ফজিলত ও আমল এবং করণীয় বর্জনীয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি কারবালার ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।

এসএন /সীমা

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]