37402

06/19/2025 ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি তিন জেলায়

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি তিন জেলায়

স্বাস্থ্য ডেস্ক

১৮ জুন ২০২৫ ১৯:১৪

রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের একাধিক জেলাও এবার ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ কীটতাত্ত্বিক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে এডিস মশার ঘনত্ব আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। একইভাবে রাজধানীর বাইরেও ঝিনাইদহ, মাগুরা ও পিরোজপুর পৌরসভায় এডিসবাহিত পাত্রের হার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে অনেক বেশি, যা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব মাপার সূচক ব্রুটো ইনডেক্স পেরিয়ে গেছে নিরাপদ সীমা।

বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর আইইডিসিআরের অডিটোরিয়ামে ‘ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২৫’ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রুটো ইনডেক্স যদি ২০-এর বেশি হয়, তবে সে এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে বলেই বিবেচিত হয়। আইইডিসিআরের জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌরসভায় ব্রুটো ইনডেক্স দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে, মাগুরায় ৫৫.৫৬ শতাংশে এবং পিরোজপুরে ঠিক ২০ শতাংশে। পটুয়াখালী পৌরসভায়ও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সেখানে এই সূচক ১৯.২৬ শতাংশে পৌঁছেছে—যা প্রায় ঝুঁকির সীমায়।

জরিপ অনুযায়ী, ঝিনাইদহে ২৭০টি বাড়ির মধ্যে ১৬২টি পাত্রে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। একই সংখ্যক বাড়িতে মাগুরায় পাওয়া গেছে ১৫০টি পজিটিভ কনটেইনার, পিরোজপুরে ৫৪টি এবং পটুয়াখালীতে ৫২টি পাত্রে লার্ভা শনাক্ত হয়।

ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, “ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার ঘনত্ব অত্যধিক। ঝিনাইদহ শহরে ২৭০টি বাড়ি ঘুরে ১৬২টিতেই লার্ভা পাওয়া গেছে, যা থেকে ৬০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স হিসেব করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত উচ্চঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।”

তিনি জানান, পিরোজপুর ও মাগুরার বেশির ভাগ এলাকায় এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা পাওয়া গেছে, যেগুলো গ্রামীণ অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী।

তিনি আরও জানান, প্লাস্টিক ড্রাম, দইয়ের পাত্র এবং প্লাস্টিকের ঝুড়িতে লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ব্রুটো ইনডেক্স ৫.৬২ শতাংশ, বরিশালে ২.৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪.৭৯ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ায় ৭.৮৭ শতাংশ।

রাজধানীর পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ডা. তাহমিনা জানান, ঢাকায় ৫৮.৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে, যা গত বছরের ৪২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ৭২টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্ধারিত সূচকের চেয়ে বেশি, যার মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে তা খুব দ্রুত মহামারির রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ ও মাগুরার উচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের দাবি রাখে। স্থানীয় সরকার, পৌর কর্তৃপক্ষ ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]