37284

06/18/2025 বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম, দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম, দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

১৭ জুন ২০২৫ ১১:২৬

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমাগত বাড়ছেই। সর্বশেষ সোমবারও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। এতে বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সূত্র মতে, সোমবাব ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১২ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৩৫ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১০ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ—দাম বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮ ডলার। শনিবারও তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে।

এর আগে ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

বাস্তবতা হলো, ২০২২ সালের মার্চ মাসের পর গত শুক্রবার এক দিনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, অর্থাৎ এর মধ্যে তেলের দাম এক দিনে আর কখনোই এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। দুই দেশ একে অপরের দিকে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছেই, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের পক্ষে এই প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন। বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর থাকায় ইরানের পক্ষে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা তেমন একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের হেলিমা ক্রফট। তিনি অবশ্য সতর্ক— ইরান ট্যাংকারে হামলা চালাতে পারে, এমনকি প্রণালিতে মাইনও পেতে রাখতে পারে।

এ ছাড়া হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে। ফলে আমদানি-রপ্তানির সময় বেড়ে যাবে, বেড়ে যাবে খরচ। ফলে বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ক্রেতাদের কাছে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা না গেলে চুক্তি বাতিলের ঝুঁকিও আছে।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন সময় তৈরি হলো, যখন বিশ্ববাজার এমনিতেই নানা অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক বসানোর হুমকি দেওয়ায় ইতিমধ্যে বিশ্ববাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। এতে ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কপালের চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ দেশে জ্বালানি পদার্থ আমদানি নির্ভর। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে পরি দেশের বাজারে। কারণ আমদানি মূল্য বেড়ে যায়।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান ‘যুদ্ধ’ পরিস্থিতি বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সোমবার (১৬ জুন) এক সভায় বক্তৃতাকালে এই উদ্বেগের কথা জানান।

তিনি বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল ‘যুদ্ধ’ বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, এ সংঘাতের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক খাতে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]