নতুন বছরের প্রথম দিন সারাদেশে উৎসবের মধ্য দিয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই দেওয়া হচ্ছে। বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আনন্দে খুশি অভিভাবকরাও।
ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। রাজধানীর ডেমরার শামসুল হক স্কুল এন্ড কলেজে দেখা গেছে, নতুন বই পেতে শীতকে উপেক্ষা করে সকাল সকাল স্কুলে উপস্থিত হন শিক্ষার্থীরা। ১০টায় বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও অনেক আগেই স্কুলে উপস্থিত হন তারা। বই বিতরণ কার্যক্রম শুরুর পর মুহূর্তেই নতুন বইয়ের গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বুকের সঙ্গে দুই হাত দিয়ে নতুন বইগুলো জড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ফাইজা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বই পাব সেই টেনশনে রাতে ঠিকভাবে ঘুমোতে পারিনি। বই নিতে সকাল সকাল মাকে নিয়ে এসেছি। বই পেয়ে আমার অনেক আনন্দ লাগছে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বই পড়া শুরু করব।’
ঢাকার বাইরেও নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের মাতোয়ারা হতে দেখা গেছে। সবাই মেতে উঠেছেন নতুন বইয়ে।
শিক্ষাকে মানসম্মত করা এবং ঝরে পড়ার হার রোধ করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’ করে আসছে।
২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ৪৬৪ কোটি ৭৮ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৩ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
২০১৭ সাল থেকে সরকার সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের তাদের মাতৃভাষায় অধ্যায়নের জন্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো এবং সাদরি ভাষার বই বিতরণের পাশাপাশি অন্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বই বিতরণ করছে।
জানা গেছে, এবারের শিক্ষাবর্ষে প্রাক -প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্তরে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ টি বই বিতরণ করা হবে।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য গতকাল রোববার সকালে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। আজ সোমবার থেকে সারাদেশে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও নতুন বছরের প্রথমদিনে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য 'বই বিতরণ উৎসব-২০২৪' অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই উৎসব শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সভাপতিত্বে বই উৎসব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি বাড়ল-
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি বই ছাপা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে মোট বই ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণিতে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য এবার মোট ২ লাখ ৫ হাজার ৩১ কপি বই ছাপা হচ্ছে। অন্য বইয়ের মধ্যে ৫ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’ বই ছাপা হবে। তা ছাড়া শিক্ষকদের ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হবে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তক পাঠানো হয়েছে।