17292

05/07/2024 পৃথিবীতে প্রথম কোরবানি হয়েছিল যেভাবে

পৃথিবীতে প্রথম কোরবানি হয়েছিল যেভাবে

ধর্ম ডেস্ক

৫ জুন ২০২৩ ২২:০৪

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০ জিলহজ কোরবানি করেন পুরো বিশ্বের সামর্থ্যবান মুসলমানেরা। পরিস্থিতিভেদে জিলহজের ১১ ও ১২ তারিখে সুর্যাস্ত পর্যন্তও কোরবানি করা যায়। বর্তমানে প্রচলিত কোরবানির ধারা হজরত ইবরাহিম আ. থেকে চলে আসলেও এর ইতিহাস আরও পুরোনো।

পৃথিবীতে প্রথম কোরবানির নিয়ম চালু হয় মূলত আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালামের ছেলে হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, আল্লাহ তো সংযমীদের কোরবানিই কবুল করে থাকেন। (সুরা মায়িদা: ২৭)

পৃথিবীর প্রথম সেই কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়- আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মধ্যে একটি বিষয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিলো। দ্বন্দ্ব নিরসনে আদম আলাইহিস সালাম তাদের আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি কোরবানী করার নির্দেশ দিলেন।

সেসময় কোরবানি গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, খোলা জায়গায় কোরবানীর জন্য নির্ধারিত বস্তু রেখে দেওয়া হতো। তখন আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কোরবানিকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কোরবানি কবুল হতো না, তারটা পড়ে থকত।

আদম আলাইহিস সালামের নির্দেশের পর তার দুই ছেলে কোরবানীর প্রস্তুতি নিলেন। দুই ছেলের মধ্যে কাবিল চাষাবাদ করতো আর হাবিল পশুপালন করতো। কাবিল নিজের চাষ করা গমের শীষ থেকে ভাল ভালগুলো বের করে নিয়ে খারাপগুলোর একটি আটি কোরবানির জন্য পেশ করল। আর হাবিল তার পশুগুলোর মধ্যে থেকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট একটি দুম্বা কোরবানির জন্য পেশ করল।

এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবিলের কোরবানিটি ভষ্মীভুত করে দিলো। (ফতহুল কাদিরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবিলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে। অবশেষে ইসমাঈল জাবিহুল্লাহ (আ.)-কে ওই দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়।) আর কাবিলের কোরবানি যথাস্থানেই পড়ে থাকল।

অর্থাৎ হাবিলেরটি গৃহীত হলো আর কাবিলেরটি হলো না। কিন্তু কাবিল এ আসমানি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবিলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল।

হাবিল বলেছিল— ‘তিনি মুত্তাকি কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাকওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাকওয়া অবলম্বন করলে তোমার কোরবানিও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কোরবানি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?…..তবুও এক পর্যায়ে কাবিল হাবিলকে হত্যা করে ফেলল। (তাফসির ইবনু কাসির, দুররে মনসুর, ফতহুল বায়ান: ৩/৪৫ ও ফতহুল কাদির: ২/২৮-২৯)

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হাবিল ও কাবিল কর্তৃক সম্পাদিত কোরবানির এ ঘটনা থেকেই মূলত কোরবানির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। এ ঘটনা থেকে লক্ষণীয় হলো, কোরবানীর ক্ষেত্রে মনের স্বচ্ছতা এবং আল্লাহর জন্য নিবেদীত প্রাণ হওয়া আবশ্যক। কারণ, আল্লাহ তায়ালা একনিষ্ঠ মনে দেওয়া হাবিলের কোরবানি কবুল করেছিলেন। পক্ষান্তরে কাবিল খাদ্যশস্য কোরবানি হিসেবে কবুল করেননি, তার মনে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ইচ্ছে না থাকায়। অতএব কোরবানি কবুলের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রবল ইচ্ছা থাকতে হবে, অন্যথায় কোরবানি কবুল হবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন— “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুস্পদ জন্তু জবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাকো এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও।” (সুরা হজ:৩৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মদ (স.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তাআলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কোরবানির বিধান দিয়েছেন। (তাফসিরে নাসাফি: ৩/৭৯; কাশশাফ: ২/৩৩)

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]