13655

04/20/2024 পরকীয়া সন্দেহে নববধূকে খুন, ভারতে বাংলাদেশি প্রকৌশলী আটক

পরকীয়া সন্দেহে নববধূকে খুন, ভারতে বাংলাদেশি প্রকৌশলী আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ জানুয়ারী ২০২৩ ০০:০৯

ভারতে নববধূকে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তি একজন অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী এবং পেশায় হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বোনের স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বাংলাদেশি পরিচয় এবং ভারতে অবৈধভাবে বসবাসের তথ্য বেরিয়ে আসে। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং দ্য হিন্দু

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে একটি ফ্লাটে গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করেন ওই প্রকৌশলী স্বামী। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম নাসির হুসেন। বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টার সময় গত শনিবার তাকে কলকাতা থেকে আটক করা হয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ২২ বছর বয়সী গর্ভবতী গৃহবধূর হত্যার তদন্তে অভিযুক্ত ওই স্বামী অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী বলে তথ্য সামনে আসার পর তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। গত শনিবার কলকাতার উপকণ্ঠ থেকে সন্দেহভাজন নাসির হুসেনকে গ্রেপ্তার করে বেঙ্গালুরু শহর পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব বিভাগ।

শিলিগুড়ির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করতে ব্যর্থ হওয়ার পর কলকাতায় ফেরার সময় আটক হয় অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বেঙ্গালুরু পুলিশ অভিযুক্ত নাসির হুসেনকে ধরার জন্য পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি জেলার পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি অত্যন্ত কৌশলে বেঙ্গালুরু থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পুলিশের চোখ এড়াতে সক্ষম হয়। পরে সীমান্ত পার হতে ব্যর্থ হয়ে কলকাতায় ফেরার সময় গ্রেপ্তার হন তিনি।

নাসির হুসেনের হাতে নিহত ওই স্ত্রীর নাম নাজ খানম। ২২ বছর বয়সী গর্ভবতী এই নারীর পরিবার নাসিরকে পশ্চিমবঙ্গের এতিম ছেলে বলে জানত। তারা জানিয়েছে, পুলিশ তাদের না জানানো পর্যন্ত তারা জানত না যে, নাসির অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী।
প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, নাসির হুসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন না থাকলেও দীর্ঘদিন কাজ করার কারণে দক্ষ একজন হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। ২০১৪-১৫ সালে তিনি অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে আসেন। পরে তিনি কলকাতা, দিল্লি ও গুরগাঁওয়ে কাজ করেন এবং অ্যাপলের তৈরি গ্যাজেটসহ মোবাইল ও ল্যাপটপ পরিচালনার কাজে দক্ষতা অর্জন করেন।

নিজের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য বেঙ্গালুরু সঠিক জায়গা বোঝার পর তিন বছর আগে কর্ণাটকের এই রাজধানী শহরে যান অভিযুক্ত নাসির। পরে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকার সময় প্রতিবেশী নাজ খানমের সঙ্গে নাসিরের দেখা হয় এবং তারা উভয়ই একে অপরের প্রেমে পড়েন।

ছয় মাস আগে নাজ ও নাসিরের বিয়ে হয় এবং স্ত্রীকে হত্যার ২০ দিন আগে বেঙ্গালুরুর সুভাষনগরে একটি ফ্লাটে ওঠেন তারা। পুলিশ জানায়, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে নাসির হুসেন তার স্ত্রী নাজ খানমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর ১৬ জানুয়ারি এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

তদন্তে জানা যায়, নাজ খানমের সঙ্গে তার বোনের স্বামী ইলিয়াজ পাশার সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ করেছিলেন নাসির। পরে নাজ গর্ভবতী জানতে পেরে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন। নাজ রাজি না হলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায় নাসির।
বেঙ্গালুরু শহর পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব বিভাগের ডিসিপি সি.কে. বাবা বলেন, ‘এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অভিযুক্ত এই ব্যক্তি পুলিশের দলকে বার বার ফাঁকি দিচ্ছিল। তিনি আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলেও পুলিশ পিছু নেওয়ায় তা করতে পারেনি। আর তাই বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য পথ নেওয়ার চেষ্টা করার সময় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ।’

সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, অভিযুক্ত নাসির পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে শিলিগুড়ির কাছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল এবং সীমান্ত অতিক্রম করতে সাহায্য চেয়ে একজন এজেন্টের সাথে যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু বিএসএফ টহল বাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি পালাতে পারেননি। এরপর হুসেন কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ফ্লাইটে টিকিট বুক করেন। কিন্তু ফ্লাইটে ওঠার আগেই পুলিশের কাছে ধরা পড়েন তিনি।

অভিযুক্ত নাসির পুলিশকে জানিয়েছে, সে ১৮ বছর বয়সে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং কাজ করার জন্য ও নকল আবাসিক ও শিক্ষাগত সনদ পেতে কলকাতা, মুম্বাই, গুরগাঁও, দিল্লিতে অবস্থান করে।

পরে তিনি জাল সার্টিফিকেট নিয়ে বেঙ্গালুরুতে চলে আসেন এবং একটি আইটি ফার্মে হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বেশ ভালো বেতনে যোগদান করেন।
নাসির জানান, তিনি সুদ্দুনগুন্টেপালিয়ায় একটি ভাড়া করা ফ্লাটে থাকতেন এবং নিজেকে পশ্চিমবঙ্গের এতিম ছেলে দাবি করে ২২ বছর বয়সী স্থানীয় মেয়ের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব ও পরে কয়েক মাস আগে তাকে বিয়ে করেন।

তবে বিয়ের পরপরই নাসির তার স্ত্রীকে সন্দেহ করতে শুরু করেন এবং বোনের স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রায়ই কলহে লিপ্ত হতেন। আর এই ধরনের কলহ চলাকালীন গত ১৫ জানুয়ারি তিনি স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পরে হত্যার বিষয়ে নিজের শ্যালককে বার্তা পাঠিয়ে দিল্লির উদ্দেশে ফ্লাইটে উঠে বেঙ্গালুরু থেকে পালিয়ে যান নাসির।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]