12729

04/29/2024 বকশীবাজারে মাদরাসা শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ যে কারণে

বকশীবাজারে মাদরাসা শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ যে কারণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:৪১

‘বকশীবাজার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’র উদ্বোধন করবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সে অনুযায়ী সাজানো হয়েছে উদ্বোধন মঞ্চ। প্রস্তুত করা হয়েছে মাঠও। তবে এতে বাধ সাধেন সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, মাঠটি ডিএসসিসির নয় বরং মাদরাসার নিজস্ব সম্পত্তি। যদি উদ্বোধন করতেই হয় তাহলে সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া খেলার মাঠ নামেই নথিভুক্ত করে উদ্বোধন করতে হবে।

দাবি অনুযায়ী বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল দশটা থেকে উদ্বোধন মঞ্চের পাশের ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ এবং স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এই মাঠ আলিয়ার, এই মাঠ আমাদের’, ‘মাঠ চাই, মাঠ চাই’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, মাদরাসার এই মাঠ নিয়ে এমনিতেই সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। সেখানে কোর্টের সিদ্ধান্ত আসার আগে সিটি কর্পোরেশন নিজেদের নামকরণ করে মাঠ নিতে পারে না। মাঠটি মাদরাসার নিজস্ব সম্পত্তি। একটিমাত্র খেলার মাঠ যদি দখল হয়ে যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মতো আর কোনো জায়গা থাকবে না।

আহসানুল হক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, মাদরাসা মাঠ উদ্বোধন হচ্ছে অথচ প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষই কিছু জানে না। এমনিতেই কারা অধিদপ্তর প্রশিক্ষণের জন্য মাঠটি সাময়িক ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে এখন নিজেরাই এর মালিকানা দাবি করে বসেছে। এখন আবার মাঠটিকে সিটি কর্পোরেশনও নিজেদের আয়ত্তে নিতে চাইছে। কিছুতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই দুপুর ১টায় মাঠ উদ্বোধনের জন্য আসেন মেয়র তাপস। তার আগমনের পর আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মাঠের ভেতর থেকেই উদ্বোধন মঞ্চের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। এতে উদ্বোধন মঞ্চের বেশ কাছ থেকে ঘুরেই গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন মেয়র ও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন। এরপর শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। শিক্ষার্থীরাও প্রতিরোধ গড়ে তুললে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় বিশ মিনিট ধরে চলা এই সংঘর্ষের সময় আল-আমিন হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে সিএনজিতে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যেতেও দেখা যায়।

এরপর পরিস্থিতি শান্ত করতে এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসেন মাদরাসার শিক্ষক পরিষদ কাউন্সিল এবং অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুর রশিদ। তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের বোঝানোর পর পুলিশ সদস্যদের মাঠের বাইরে চলে আসতে অনুরোধ জানান তারা।

মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, এমন অবস্থা তৈরি হবে এটি আমরা আশা করিনি। মেয়র যেভাবে মাঠের সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন ও গর্ত ভরাট করেছেন, সেজন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বর্তমানে এই মাঠটির মালিকানা নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং করা অধিদপ্তরের মধ্যে কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। তাই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমরা শিক্ষক, পুলিশ প্রশাসন ও মাদরাসা ছাত্রলীগ একসঙ্গে বসে আলোচনা করব।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষার্থীরা একটি দাবিকে কেন্দ্র করে তাদের গায়ে হাত দেওয়া ও লাঠিপেটা করার বিষয়টি প্রত্যাশিত নয়। আমি শুনেছি আমাদের একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চকবাজার থানাসহ দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা যারা রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।

এদিকে বর্তমানে মাদরাসা প্রাঙ্গণের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাফর হোসেন। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি মাঠটি নিয়ে কারা অধিদপ্তর এবং মাদরাসার ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। মূলত সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না হয় এবং বিষয়টি যেন বেশি দূর না গড়ায় সেভাবেই বিষয়টি তদারকি করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী আটকের বিষয় তিনি বলেন, কাউকে আটক করা হয়েছে কি না এখন বলতে পারছি না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]