রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


‘জয় বাংলা’ আমাদের মাথা উঁচু করে চলার স্লোগান


প্রকাশিত:
১৫ মার্চ ২০২২ ২১:২৯

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২২ ২২:৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

‘জয় বাংলা’ বিজয়ী জাতির, বাঙালি জাতির মাথা উঁচু করে চলার স্লোগান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সোমবার (১৪ মার্চ) রাতে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) আয়োজিত ‘জয় বাংলা উৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব অর্জনের মূলে থাকা ‘জয় বাংলা’কে তার সরকার জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই জয় বাংলা স্লোগানটা আজ সবার হয়েছে এবং এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা এটাই বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই- আমরা বিজয়ী জাতি, আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মাথা নত করে আমরা চলি না, মাথা নত করে চলবো না। বিশ্ব দরবারে বাঙালি মাথা উঁচু করেই চলবে।

প্রধানমন্ত্রী তার একমাত্র ছোটবোন শেখ রেহানার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা দুজনেই আজ সব থেকে বেশি খুশি। কারণ এই জয় বাংলা স্লোগান এদেশের মানুষকে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে দেশকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। যে স্লোগান দিয়ে এদেশের মানুষ রক্তের অক্ষরে লিখে গেছে- আমি বিজয় আনতে চাই। বাংলাদেশের জয় হবে। আজ সেই জয় বাংলা আমাদের সবার, এদেশের মানুষের। বিজয়ী জাতির-বাঙালি জাতির, আমাদের মাথা উঁচু করে চলার এ স্লোগান।

এই স্লোগান ধারণে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো ত্যাগ যে বৃথা যায় না আজ সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রদত্ত তার ঐতিহাসিক কালোত্তীর্ণ ভাষণ সমাপ্ত করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করে। সেই থেকে এটি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী কোটি কোটি জনতার প্রাণের স্লোগানে পরিণত হয়। নিরস্ত্র বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনার অনুপ্রেরণা হয়ে যায় ‘জয় বাংলা’।

বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকেই বঙ্গবন্ধু এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি নিয়েছিলেন।

এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১০ মার্চ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণের জন্য হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে ২০২২ সালের ২ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয় বাংলা স্লোগান এক সময় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে, হ্যাঁ আমরা আওয়ামী লীগ যারা করি আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যারা ধরে রেখেছি, যারা এদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এবং মুক্তিযোদ্ধারা- তারা এটা ধরে রেখেছিলেন। বাধা এসেছে, অনেক সময় অনেক কটুক্তি -সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা এই সত্যটাকে ধরে রাখতে পেরেছিলাম বলেই আজ এটা জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান আমাদের মুক্তি সংগ্রামের স্লোগান। জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান। জয় বাংলা আত্মত্যাগের স্লোগান। জয় বাংলা আমাদের অর্জনের স্লোগান। যে স্লোগানের মধ্যদিয়েই আমরা বিজয় অর্জন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য। যে মানুষগুলো ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যখন ৬ দফা দিলেন ঠিক তার আগেই ছাত্রলীগকে এই জয়বাংলা স্লোগানটাকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর অন্তর্নিহিত অর্থ একটাই ছিল- সংগ্রামের মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনাটা জাগ্রত করা। এই স্লোগানের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং সবশেষে বিজয় অর্জন। যার প্রতিটি পদক্ষেপ জাতির পিতা নিয়েছিলেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে।

স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের যে ভাষণ, সেই ভাষণও তিনি শেষ করেন ‘জয় বাংলা’ বলে। অর্থাৎ বাঙালির যে বিজয় হবে সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর মোকাবিলা করতো এই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। এই স্লোগান প্রতিটি মুক্তকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করতো।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। সে সময়ে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে এনে রেখে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময় যে অপপ্রচার ছিল স্বাধীনতা অর্জনের পরও সেটা থেমে থাকেনি। অর্থাৎ স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্ত সবসময় ছিল। যখন অনেক ষড়যন্ত্র করেও মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছতে পারেনি তখনই চরম আঘাত এলো ৭৫ এর ১৫ আগস্ট।

তিনি বলেন, যে স্লোগান একদিন এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল, একটি গেরিলা যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেছিল, পাকিস্তানিদের বর্বর নির্যাতনও যে স্লোগানকে একদিন থামাতে পারেনি; সেই স্লোগান নিষিদ্ধ হয়ে গেল। ১৫ আগস্ট আমরা আপনজন হারিয়েছি, আর দেশের জনগণ তাদের সব সম্ভাবনাকেই হারিয়ে ফেললো।

সরকার প্রধান বলেন, আমাদের কাজটা হচ্ছে জনগণের সেবা করা। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সবকিছু যেন সহজভাবে চলতে পারে সে সুযোগটা করে দেওয়া, সেটাই আমরা করে দিচ্ছি। আমরা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি যেখানে দেশি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে উঠবে এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়বে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার তৃণমূলকে লক্ষ্য ধরেই দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা যত বাড়বে ততই আপনাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত হবে।

এ সময় বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আমাকে বলেছিল এতগুলো বেসরকারি ব্যাংক দিয়ে কী হবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতো খুব ছোট। কিন্তু এটা ছোট থাকবে না বরং একদিন যে বড় হবে সে আশাবাদই আমি তখন ব্যক্ত করেছিলাম।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বেসরকারি ব্যাংকের আর শাখা খোলার সুযোগ না দিয়ে সরকারি ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি আমাদের সরকারি বাস চলাচল করবে সেখানেও বাধা দেওয়া এবং সেটাও বন্ধ করার প্রচেষ্টা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এতই দুর্বল ছিল যে আন্তর্জাতিক সংস্থা যে পরামর্শ দিতো তাই তারা মেনে চলতো। নিজেদের কোনো চিন্তা-চেতনা বা পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু আমি সরকারে আসার পর থেকে ওইসব পরামর্শ শুনি নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শুধু একটা কথা বলেছি, এই দেশ আমাদের। আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের মানুষের মঙ্গল কিসে হবে আমরাই তা সবথেকে ভালো জানি। যেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক সেটাই আমরা করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ব্যাংক, বিমা থেকে শুরু করে বেসরকারি টেলিভিশন, বেসরকারি রেডিও, সবার হাতে মোবাইল ফোন, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেওয়া সহ ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যাংক ব্যবস্থাকে তৃণমূলে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ মাত্র ১০ টাকায় একজন কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ভতুর্কির টাকাটাও ব্যাংকের মাধ্যমেই তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত বা গৃহহীন আর থাকবে না।

এসএন/তাজা/২০২২

সূত্র: বাসস

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top