সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেও সড়ক ছাড়ছেন না শিক্ষকরা
প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৪৪
আপডেট:
১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০১:০৬

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেও সড়ক ছাড়ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনেকে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা। তবে হাইকোর্টের মাজার গেটের কাছে আসতেই তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর এখানেই অবস্থান নেন তারা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিজেদের দাবি পূরণে এখনও অনড় শিক্ষকরা। ফলে দুই পাশের সড়ক বন্ধ থাকায় বিঘ্ন দেখা দিয়েছে যান চলাচলে। একইসঙ্গে দোয়েল চত্বর থেকে সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারী-চাকরিজীবীরা।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। তাদেরই একজন মো. কাউসার। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার আরবি প্রভাষক। ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজই ঢাকায় আসেন।
প্রভাষক কাউসার বলেন, গত তিনদিন ধরে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা শিক্ষকরা ধাপে ধাপে আসছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এভাবেই অবস্থান করবো। শুধু ঢাকায় নয়, আমাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করেছি। তবে শিক্ষক নেতারা সরতে না বললে আমরা এখানেই থাকবো। দাবি আদায় না হলে বাড়ি ফিরবো না ইনশাআল্লাহ।
নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের নিয়োগ হয় সরকারিভাবে। নিয়োগ প্রক্রিয়াও একই নিয়মে হয়। তিনটি ধাপ পার করে আমরা শিক্ষক হই। এনটিআরসির মাধ্যমে সবকিছু হলেও আমরা বহু সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো বদলি। অর্থাৎ আমাদেরই একজন শিক্ষকের বাড়ি টাঙ্গাইলে আবার আরেকজনের নারায়ণগঞ্জে। এখানে তাদের থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাসা ভাড়া নিয়েই তাদের থাকতে হচ্ছে। অথচ বাসা ভাড়া বাবদ আমরা সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা পাই, যা এ সময়ে কিছুই হয় না। তাই বাসা ভাড়াসহ তিন দাবিতে আমাদের এ অবস্থান।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা তোফাজ্জল হোসেনসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক জানান, নিজ বাড়ি বা বাসা থেকে বেরিয়েই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস নিতে পারছেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের যেন কোনো মূল্যই নেই। বেসরকারি মাধ্যমিক থেকে শুরু করে ওপরের স্তরের সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক কিংবা অধ্যাপকদের খুব কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। কারণ তাদের বাড়ি এক জেলায় হলে কর্মস্থল হয় অন্যত্র। তাই এ বৈষম্য দূর করতে হবে।
যশোর থেকে আসা শিক্ষক নাজমুল হক তুহিন বলেন, বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে একজন মানুষ কীভাবে এক হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন। আগে ৫০০ টাকা ছিল। কিন্তু কিছুদিন হলো তা বাড়িয়ে হাজার করেছে। তবে চিকিৎসা ভাতা এখনও ৫০০ টাকা রয়ে গেছে। এ টাকা দিয়ে কোনোভাবেই চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। তাই আমরা সামান্য কিছু বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে। অর্থাৎ আমাদের মৌলিক দাবি তিনটা। প্রথমত মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাসা ভাড়া। দ্বিতীয়ত চিকিৎসাভাতা ১৫০০ টাকা ও তৃতীয়ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের উৎসবভাতা ৭৫ শতাংশ।
শিক্ষক নেতারা জানান, আমাদের এসব দাবি মেনে নিয়ে আজকের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। নয়তো আগামীকাল থেকে জাতীয়করণের জন্য একদফা এক দাবিতে রূপান্তরিত হবে। এরই মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তবে দাবি না মানলে আগামীকাল থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, আমরা দফায় দফায় শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বুঝিয়ে সড়ক ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে তারা এখনও অবস্থান করছেন। আশা করছি কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ফিরে যাবেন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: