রবিবার, ২৪শে আগস্ট ২০২৫, ৯ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


এক বছরেও স্থিতিশীলতা আসেনি প্রশাসনে, বেড়েছে ঘুস-দুর্নীতি


প্রকাশিত:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৩০

আপডেট:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ২৩:২৫

ছবি ‍সংগৃহিত

অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত এক বছরে প্রশাসনে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে চরদখলের মতো চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন স্তরের আমলারা।

বিগত সরকারের সময় পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অনসার্ভিসে থাকা কর্মকর্তারা এক মাসের মধ্যে তিন ধাপে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সহযোগী ডিসিদের প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে গিয়ে ঘটে লঙ্কাকাণ্ড।

ডিসি নিয়োগ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা হাতাহাতি, ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। জনপ্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এক ঘণ্টা ওয়াশরুমে আটকে রাখেন ডিসি নিয়োগে বঞ্চিতরা।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী স্বৈরশাসনের বিদায়ের এক বছর পরও ফেরেনি বিশৃঙ্খল প্রশাসনের শৃঙ্খলা। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্ব পালনে গাফিলতি যেন স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এমন চিত্র।

অধিকাংশ অনিয়মের ক্ষেত্রে একরকম নির্বিকার ছিলেন নীতিনির্ধারকরা-এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে-গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট (চেতনা) ধারণ ও জনআকাঙ্ক্ষার প্রশাসন তৈরিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রশাসনকে একটি প্রমিত কাঠামোতে আনার পরিবর্তে উলটো প্রশাসনকে লন্ডভন্ড করা হয়েছে। আওয়ামী আমলের নষ্ট-ভ্রষ্ট হওয়া প্রশাসন বহাল থাকার কারণেই মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গত এক বছরে প্রশাসনের বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, অধ্যাদেশ প্রণয়ন, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিসহ নানা পদক্ষেপে বছরজুড়েই ছিল সমালোচনার ঝড়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল।

এ ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল খোদ জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধেও। যদিও এই বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হয়নি বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তবে তদন্ত প্রতিবেদন অদ্যাবধি প্রকাশ করা হয়নি।

শুধু তাই নয়, প্রায় ১৬ বছর পর ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী নেওয়া হলেও তা যাছাই হয়নি। পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি করে প্রশাসনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। এমনকি প্রশাসন ও (প্রশাসন ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডার) আদার্স ক্যাডার কর্মকর্তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে।

প্রশাসন ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়ে অবসরে গেছেন তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হলেও তা নিয়ে কমিটির বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ উঠেছে।

ওই কমিটির বিরুদ্ধে আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে কালক্ষেপণ এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান যুগান্তরকে বলেন, গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আসেনি। আমার মতে, প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচারালয়ে সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সব জায়গায় এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১৬ বছর পর ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী সরকারের সময় উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সীমাহীন লুটপাট করেছেন। তাদের অনেকেই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। এসব রাঘববোয়ালদের সম্পদ বিবরণী যাচাই করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার কথা বলা হলেও বিগত এক বছরে সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

এর আগে ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও একবার সরকারি কর্মচারীর কাছ থেকে সম্পদ বিবরণী নেওয়া হয়েছিল। তখনো তা পর্যালোচনা করা হয়নি।

সাবেক সচিব, অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, এ সময় প্রশাসনে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েছে। চালকের আসনে বসা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, সীমাহীন লোভ এবং দুর্বল নেতৃত্বের কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে। আগের চেয়ে দুর্নীতি বহুলাংশে বেড়ে গেছে। প্রশাসন পরিচালনায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। বিএনপিপন্থি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে নেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রশাসনে বহিরাগতরা গিয়ে খবরদারি করেছে। কিন্তু বিএনপিপন্থিদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের ‘টপ টু বটম’ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ঘুস, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা অতীতের চেয়ে বেড়েছে। চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। আমরা বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

এসএন/রুপা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top