নির্বাচন কমিশনের শূন্যতা নিয়ে আইনের বিধান কী?
 প্রকাশিত: 
                                                ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:২৬
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৫০
                                                
 
                                        নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চেয়ারম্যান কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পুরো কমিশন একযোগে পদত্যাগ করায়, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন ইসি গঠন নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। তবে তথ্য বলছে- নতুন কমিশন গঠনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সংস্কার করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, কিন্তু কবে এবং কীভাবে এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, তাও নির্ধারিত হয়নি। তবে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন যে, নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
বর্তমানে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠকে একজন উপদেষ্টা এই বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলেন, কিন্তু বিষয়টি খুব বেশি এগোয়নি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আইন সংস্কার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
তবে সূত্র বলছে— নতুন কমিশন গঠনের আগে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন সংস্কার করার চিন্তা রয়েছে। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছিল, যা এখনো সংরক্ষিত। এছাড়া, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) একটি খসড়া তৈরি করেছে। ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ প্রণয়ন করে। নতুন আইন (অধ্যাদেশ) তৈরি করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় খসড়াগুলো পর্যালোচনা করছে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সংস্কার সরাসরি সরকার করবে, নাকি নতুন কমিশন গঠনের পর প্রস্তাব আসবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন সংস্কার করার পরই নতুন কমিশন গঠন করা উচিত, অন্যদিকে কিছু ব্যক্তির মতে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ সময় ধরে শূন্য থাকা উচিত নয়।
৭ সেপ্টেম্বর, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। অগ্রাধিকার তালিকায় অন্যান্য কাজ রয়েছে। নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নির্ধারিত আইনের কথা বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দৈনন্দিন কাজ সচিব (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়) চালিয়ে নিতে পারবেন।
আগের নির্বাচন কমিশন প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল ও তার চার সহকর্মী ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন, ফলে কমিশন শূন্য হয়ে পড়ে। এই শূন্যতা পূরণের জন্য আইনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তবে কতদিনে শূন্যতা পূরণ করতে হবে, সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ’ আইনে এ ব্যাপারে কোনো বিধান নেই।
পূর্বে নির্বাচন কমিশন শূন্য থাকার নজির রয়েছে। ২০০৭ সালে বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগের পর সপ্তাহখানেক ইসি শূন্য ছিল। ২০২২ সালে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার পর প্রায় ১২ দিন শূন্য ছিল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাময়িক শূন্যতা থাকতে পারে, তবে তা দীর্ঘকালীন হওয়া উচিত নয়। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং নতুন কমিশন আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারে।
বর্তমান সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সর্বোচ্চ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে কমিশন গঠনের কথা বলা আছে। ২০২২ সালে এই আইন করে আওয়ামী লীগ, যা আগের দুই কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার আইনি রূপ ছিল। এই আইন নিয়ে সংসদ ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন কমিশন শূন্য থাকলে কোনো সমস্যা নেই। ইসি সচিবালয় রুটিন কাজ চালিয়ে যেতে পারে। নির্বাচনের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। মাসখানেক পরে ইসি গঠন করা হলে কোনো সমস্যা হবে না।’
এম সাখাওয়াত আরো বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের বিষয়টি আগে পর্যালোচনা করা উচিত। ২০২২ সালের আইন ও নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা কমাতে তা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: