ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং
 প্রকাশিত: 
                                                ২১ মে ২০২৪ ১২:১২
 আপডেট:
 ১ নভেম্বর ২০২৫ ০৪:৩০
                                                
 
                                        দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং। গত তিন দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে এলেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার পর ঢাকায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকা বিমানবন্দরে পেনি ওংকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা সফরের সময় পেনি ওং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন পেনি। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটি অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন পর অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গা দ্বিপক্ষীয় সফর এটি। পেনির ঢাকা সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেবেন। পাশাপাশি পেনি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে জোর দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী। বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মনোভাব ইতিবাচক ছিল না। দেশটি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, নির্বাচন যে পরিবেশে হয়েছে তা ‘দুঃখজনক’। তবে নির্বাচনের চার মাসের বেশি সময় পর সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি এলবানিজ পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আগামী বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সরকারপ্রধানের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ বলে জানান অ্যান্থনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা বলে দেয় দেশটি ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। সেজন্য ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়ে অ্যান্থনি সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চান।
পেনির সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদার, রোহিঙ্গা সংকট, অভিবাসন, শিক্ষা, ব্লু-ইকোনোমিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যু উঠে আসবে আলোচনার টেবিলে।
ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ও রপ্তানি বেড়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে অস্ট্রেলিয়া। টিফা কাঠামোর আওতায় দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, উল, কটন, গম, ডালসহ নিত্যপণ্য কৃষিপণ্য বাংলাদেশে আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তিগত সেবা, শিক্ষাসংক্রান্ত দক্ষতা, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ করে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হিমায়িতকরণ প্রযুক্তিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে সহযোগিতা পেতে পারে বাংলাদেশ।
এছাড়া দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চালু, দক্ষ অভিবাসীদের কর্মসংস্থান, ব্লু-ইকোনোমিসহ বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে মানবপাচার ও মাদকপাচার ও চোরাচালান নিয়ে দুই দেশ সহযোগিতার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পারে বলে ভাষ্য এ কূটনীতিকের।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ফিলিস্তিন সংকটের মধ্যে সম্প্রতি রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেছেন, শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তবে সরকারে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
পেনির ঢাকা সফরে ফিলিস্তিন ইস্যু আলোচনায় আসতে পারে জানিয়ে এক কূটনীতিক বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ইতিবাচক। বাংলাদেশ বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে। বাংলাদেশ চায়, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক। ফিলিস্তিন ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে সেটি তুলে ধরা হবে। রোহিঙ্গা সংকট এ অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেটিও আলোচনার বিষয়। ইউক্রেন সংকট এখনও শেষ হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন বাংলাদেশ সফর করেন। ভারত মহাসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে পেইন ঢাকা সফর করেছিলেন।
ঢাকায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের তথ্য বলছে, তৎকালীন অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইনের সফরটি ছিল দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশটির কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: