শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সংবাদ প্রকাশ, ব্যক্তিগত আক্রোশের জের

শায়েস্তা করতে চেয়ারম্যান বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক নাদিমকে হত্যা


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২৩ ০২:২৬

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ০৩:৪৩

ছবি সংগৃহিত

শায়েস্তা করতে জামালপুরের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে সাংবাদিক নাদিমকে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী স্থানীয় ইউপি বাবুসহ জড়িত চার আসামিকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সাংবাদিক নাদিম সম্প্রতি বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

পরে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন (বুধবার) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওৎ পেতে থাকেন।

সাংবাদিক নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে পেছন থেকে দৌড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাবু ঘটনাস্থলের কাছে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। সাংবাদিক নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরের দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানায়। র‌্যাব ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর একটি দল স্থানীয় র‌্যাবের সহযোগিতায় শনিবার (১৭ জুন) ভোরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু (৫০), তার সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল (৩৫), জাকিরুল ইসলাম (৩১) ও রেজাউল করিমকে (২৬) গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মূলহোতা বাবুসহ জড়িত গ্রেপ্তার আসামিরা সাংবাদিক নাদিম হত্যায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে।

তারা জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ড হয়। সাংবাদিক নাদিম সম্প্রতি চেয়ারম্যান বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। তবে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন।

মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন বাবু। তিনি সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দিতেই হামলা করেন।

আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে পঞ্চগড়ে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন বাবু

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান বাবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গ্রেপ্তার রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নিহত নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

বাবুর ছেলে রিফাতকে খুঁজছে র‌্যাব

কমান্ডার মঈন বলেন, সাংবাদিক নাদিম হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল প্রধান অভিযুক্ত বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান বাবু জানিয়েছে, ঘটনার সময় ছেলে রিফাতও ছিল। তবে তাকে গ্রেপ্তারের আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

ফেসবুক লাইভে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এরপরও তাকে মরতে হলো– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফেসবুকে লাইভ করেছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ভালো বলতে পারবে। তবে তিনি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি যদি অভিযোগ করতেন তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল।

হামলায় ঠিক কতজন জড়িত ছিল? জানতে চাইলে র‌্যাব গণমাধ্যম শাখার প্রধান বলেন, মামলার এজহারে ২২ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখতে পেয়েছি ১০/১২ জনকে। সব আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হয়ত এ ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার তদন্তে বিস্তারিত উঠে আসবে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top