ঢাকাকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে ঐতিহ্য বলয় তৈরি করা হচ্ছে
প্রকাশিত:
১১ মে ২০২৩ ০২:২০
আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ২০:১৯

ঢাকা শহরকে একটি পর্যটকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার (১০ মে) ঐতিহ্য বলয়-৫ এর যাত্রাপথ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় মেয়র তাপস এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা। দ্বিতীয়ত হলো আমাদের দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে করে পর্যটকরা এখানে এসে ঢাকার ঐতিহ্যকে অনুধাবন করতে পারে, উপভোগ করতে পারে।
আমরা বহির্বিশ্বে যেভাবে দেখি, ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোতে যেমনি পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে, আমরা চাই ঢাকা শহরের পর্যটন শিল্পও সেভাবে গড়ে উঠুক। পর্যটকরা ঢাকামুখী হোক। ঢাকা হোক পর্যটকবান্ধব। সেই লক্ষ্যেই আমরা সাতটি ঐতিহ্যের বলয় সৃষ্টি করছি।
সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এসব ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমাদের পরামর্শকরা কাজ করছেন।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঐতিহ্যের বলয়-৫ চিহ্নিত করেছি। একজন পর্যটক যদি আসে তাহলে সে এই বলয়ের কোন কোন স্থাপনাগুলো দেখবে, কীভাবে সে চলাচল করবে, কী কী উপভোগ করবে? এই বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি সবকিছু আমরা নির্ণয় করব এবং তাদের জন্য সে সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করব। আমরা ৫ নম্বর বলয় নিয়ে আজ থেকে কাজ শুরু করছি। পর্যটকদের সুবিধা অনুযায়ী পর্যটকবান্ধব হিসেবে আমরা প্রথমে এই বলয়টাকে সাজাবো। পরে আমরা অন্যান্য বলয়গুলোকে সাজাবো। সবমিলিয়ে আমাদের মোট সাতটি বলয় হবে।
এ সময় ৭টি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে আমাদের ৫ নম্বর বলয় শুরু হবে। আপনারা জানেন যে, এটা আমাদের জাতীয় মন্দির এবং সারাবিশ্বেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের একটি খ্যাতি রয়েছে। এটার নান্দনিকতা রয়েছে, স্থাপত্যশৈলী রয়েছে।
তার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় আকর্ষণও রয়েছে। সবমিলিয়ে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। এরপরে রয়েছে লালবাগ কেল্লা। যেটি বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি স্থাপনা। এই লালবাগ কেল্লার অনেক অংশ ভেঙে গেছে। সেগুলো কীভাবে সংস্কার করা যায় সেটাও আমরা এই বলয়ের আওতায় বিবেচনা করব।
এরপর আরেকটি বলয় হলো আমাদের আহসান মঞ্জিল কেন্দ্রিক। তারপর আরেকটি বলয় হলো আমাদের রূপলাল হাউজ কেন্দ্রিক, আরেকটি হলো বড় কাটরা ও ছোটকাটরা নিয়ে। এভাবে আমরা বিভিন্নভাবে সাতটি বলয় সৃষ্টি করছি। আজকে আমরা একটি বলয় দিয়ে শুরু করছি। পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আমরা সব বলয় সৃষ্টি করব। যেখানে একজন পর্যটক হেঁটে হেঁটে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই সেসব স্থাপনা উপভোগ করতে পারে।
ঐতিহ্য বলয় গড়ে তুলতে মেয়রের এ কার্যক্রমে সবার সহযোগিতা কামনা করে এ সময় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আমাদের এখানে একটি ধারণা হচ্ছে, উন্নয়ন মানে বুঝি শুধু অট্টালিকা নির্মাণ। কিন্তু উন্নয়ন মানে হলো অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের উন্নয়ন। আমি এর আগে কোনো মেয়রকে দেখিনি যিনি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের উন্নয়ন নিয়ে আগ্রহী। এই প্রথম কোনো মেয়র হিসেবে ফজলে নূর তাপস আগ্রহ দেখিয়েছেন। এই কাজে যদি আমরা সবাই সহযোগিতা করি এবং কাজটি আমরা সম্পূর্ণ করতে পারি, আমার মনে হয় ঢাকার ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে ফুটে উঠবে। পরামর্শকসহ সবাই মিলে যে সাতটি বলয় নির্ণয় করেছি, এর মধ্যে আজ আমরা পঞ্চম বলয় নিয়ে কাজ করছি। এরপর আমরা প্রত্যেকটি বলয় নিয়ে কাজ করব। আমাদের কথা হচ্ছে, একটা রুট (বলয়) দিয়ে যখন কেউ যাবেন, সেখানে থাকার ব্যবস্থা আছে কি না, ঐতিহ্যবাহী খাবারের বন্দোবস্ত আছে কি না? বিদেশে যেভাবে পর্যটন শিল্পকে উপস্থাপন করা হয়, ঢাকা শহরের এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও সেভাবে আমাদের মেয়র পর্যটন শিল্পকে উপস্থাপন করতে চাইছেন। আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করলে তাহলে মেয়রের এই উদ্যোগ সফল হবে বলে বিশ্বাস করি।
এর আগে মেয়র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকায় গেজেটভুক্ত ৭৪টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে ৬৬টির অবস্থান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায়। এ ৬৬টি স্থাপনাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থাপনাকে নিয়ে ৭টি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ, করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: