শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ঈদযাত্রায় ৩৪১ যানবাহন দুর্ঘটনায় নিহত ৩৫৫


প্রকাশিত:
২ মে ২০২৩ ১৮:৩৯

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ২৩:৪৫

ছবি সংগৃহিত

ঈদুল ফিতরের যাত্রায় সড়ক, রেল, নৌ-পথে সর্বমোট ৩৪১টি যানবাহন দুর্ঘটনায় ৩৫৫ জন নিহত এবং ৬২০ জন মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছেন। রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২২ জন নিহত ও ৫৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত ও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ মে) তোপখানা রোডের শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিবেদন প্রকাশ' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ১৫ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত গরমসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ মানুষের কম যাতায়াত হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিগত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে দেশের সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। ঈদের ছুটি এক দিন বাড়ানোর সুফল এবং দেশের সবকটি সড়ক মহাসড়কের পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচলের কারণে মোট যাত্রীর ১৮.২ শতাংশ মোটরসাইকেলে যাতায়াত, সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এ কারণে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ১৮.২ শতাংশ, প্রাণহানি ২১.১ শতাংশ কমেছে।

বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৭ জন নিহত, ১২০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৪.৩ শতাংশ, নিহতের ৫১ শতাংশ এবং আহতের ২১.৩ শতাংশ প্রায়।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি নমুনা রিপোর্ট বলা যায়। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে তা সংবাদমাধ্যমে আসে না। তাই এসব দুর্ঘটনার হিসাব রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এবারের ঈদে শুধুমাত্র ঈদের দিনে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সময় দুর্ঘটনায় ২১৬ জন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৯৬ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। ঈদের দ্বিতীয় দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০৫ জন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। কেবল পঙ্গু হাসপাতালে এই দুই দিনে ভর্তি রোগীর সমপরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনার খবরও সংবাদপত্রে আসেনি। ফলে এসব দুর্ঘটনার ভয়াবহতার খবর আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতেও পারিনি।

সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গত ১৪ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সড়ক মহাসড়কের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। এসব সড়কে মানসম্মত বাসের অভাবে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকের মতো ছোট পরিবহন অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহনকে বিকশিত করার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- দেশের সড়ক মহাসড়কে মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকদের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশগুলো হচ্ছে- জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতে অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস দেওয়া; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা; সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা; গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top