সোমবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


মৃত্যুর আগে বদরুদ্দীন উমরের জবানবন্দি

যেভাবে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন শেখ হাসিনা


প্রকাশিত:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:২২

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৮

ছবি : সংগৃহীত

পরপর টানা চারবার প্রধানমন্ত্রী হন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। তবে ক্ষমতার সনদে বসেন ভিন্ন কৌশলে। নির্বাচন ম্যানিপুলেট কিংবা প্রশাসন– সবই চলত তার ইশারায়। আর এসব নিয়ন্ত্রণ বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুর আগে দেওয়া জবানবন্দিতে শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের এমন কিছু চিত্র তুলে ধরেছিলেন লেখক-গবেষক বদরুদ্দীন উমর।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল বদরুদ্দীন উমরের। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার কাছেও জবানবন্দি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বার্ধক্যজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) মারা যান এই তাত্ত্বিক। এরপরই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে দেওয়া তার সেই জবানবন্দি সামনে আসে।

পাঁচ পৃষ্ঠার ওই জবানবন্দিতে শেখ হাসিনার আমলে হওয়া তিনটি নির্বাচনের বর্ণনা দিয়েছিলেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচন ম্যানিপুলেট করেছেন তিনি। এসব সম্ভব হয়েছে তার কিছু দক্ষতার কারণে। তিনি নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে পুলিশ, আমলাতন্ত্রসহ সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রথম থেকেই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন শেখ হাসিনা। আর তা করতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা সম্ভব নয়। অথচ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তিনি আন্দোলন করেছিলেন। সংশোধনীও এনেছিলেন। কোনো নীতিবোধ বা নৈতিক লজ্জাবোধ তার ছিল না। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তিনিই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিলেন। কারণ তিনি বুঝেছিলেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে পরে তারা আর জিততে পারবে না। সুতরাং নির্বাচনে জিততে হলে তাকে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে।

জবানবন্দিতে বদরুদ্দীন উমর বলেন, প্রশাসনকে দুভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন শেখ হাসিনা। প্রথমত ঘুষ, টাকা-পয়সা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে। আর দ্বিতীয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে। ২০০৯ সালের মধ্যেই এই নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন তিনি। এসবের মাধ্যমেই তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন করেছেন। ২০১৪ সালে ভোটকেন্দ্রে কাউকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ হয়েছে। অর্থাৎ দিনে ভোট হলেও আসলে ভোট হয়ে গেছে আগের রাতেই। ২০২৪ সালেও একই ঘটনা। এভাবে নির্বাচন করে তিনি জয়লাভ করেছেন। যদিও জনসমর্থনের কোনো ভিত্তি ছিল না তার। এসব নির্বাচনে তার দল ৩০০ সিটের মধ্যে চার-পাঁচটি আসনও পাবে কি না সন্দেহ। এরপরও তিনি জয়ী হয়েছেন শুধু প্রশাসনের ওপর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে। এটা গোপন কিছু না, সবাই জানে। একটা সরকার যদি চায় তারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে, তাহলে সেটা ঠেকানো কঠিন।

তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচনের কারচুপিই নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নিষ্ঠুর দমন চালিয়েছেন শেখ হাসিনা। কোনো রাজনৈতিক দল যেন কার্যকরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে, সেজন্যও নির্যাতন করা হয়েছে। প্রচুর মানুষকে গ্রেপ্তার করে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে বিনা কারণে। ‘আয়নাঘর’ নামে টর্চার সেল তৈরি করা হয়েছে। যা শেখ মুজিবের আমলেও ছিল না। শেখ মুজিব বিরোধীদের সরাসরি হত্যা করতেন। শেখ হাসিনা শুধু হত্যা করতেন না, নির্যাতনও করতেন। আর এসব করে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পেতেন তিনি। সুতরাং এভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের করায়ত্ত করেছেন শেখ হাসিনা। তবে প্রকৃতপক্ষে জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক একেবারেই ছিন্ন হয়ে গেছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top