ইউক্রেন সংকট
পুতিনের ঘোষণার পর তেলের দাম বাড়ছে
 প্রকাশিত: 
                                                ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৪:৫৩
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৩১
                                                
 
                                        পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে সেখানে সেনা পাঠিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তাতেই বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কায় পণ্যটির দাম আরও বেড়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল সোমবার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। পরে সেখানে সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দেন তিনি। তাতে আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও গতকাল থেকে সূচক পড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারের আগাম কেনাবেচায় আজ এরই মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠে গেছে, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড অয়েলের দামও প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৮২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ প্রেসিডেন্টের আরও সেনা পাঠানোর নির্দেশ ও পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাজ্য ও তার বেশ কয়েকটি পশ্চিমা মিত্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়াও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্ববাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিতে রাশ টানতে পারে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক হলো রাশিয়া। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব।
ম্যানুলাইফ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের সু ট্রিন বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সীমান্ত ‘উত্তেজনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ থাকতে পারে। তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তারা তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে, যা ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে’।
পশ্চিমা শক্তিগুলো মনে করে, বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোকে ভ্লাদিমির পুতিনের স্বীকৃতি প্রদানের ফলে রুশ সৈন্যদের আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের পথ সুগম করেছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বঘোষিত দুটি প্রজাতন্ত্র রাশিয়া-সমর্থিত বিদ্রোহীদের আবাসস্থল, যাঁরা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে আসছেন। রাশিয়ার পদক্ষেপ কার্যত ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনার পথকে ক্ষীণ করে তুলেছে।
এদিকে রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা জ্বালানি তেলের মতো বৈশ্বিক শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আজ এরই মধ্যে জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২ শতাংশের বেশি ও চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বিত সূচক ১ দশমিক ৪ শতাংশ পড়ে গেছে। এর আগে গতকাল সোমবারের লেনদেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ, ডাও জোন্স ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও নাসড্যাক ১০০ সূচক ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে।
এ ছাড়া গতকাল লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ১ দশমিক ২৪ শতাংশ ও এফটিএসই ২৫০ সূচক ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসের এইএক্স ১ দশমিক ২২ শতাংশ, প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক ১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ফ্রাঙ্কফুর্টের ড্যাক্স ২ শতাংশ পড়েছে।
সিআইএমবি প্রাইভেট ব্যাংকিংয়ের অর্থনীতিবিদ সং সেং উন বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের মনে এখন রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি পরিবহনের খরচও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিজুহো ব্যাংকের অর্থনীতি ও কৌশল বিভাগের প্রধান বিষ্ণু ভারথান বলেছেন, রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো একটি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের সূত্রপাত করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। সেটি ঘটলে প্রথমেই দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে পশ্চিমা দেশগুলো।
জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম সম্প্রতি ৯০ ডলার অতিক্রম করে। সব মিলিয়ে পণ্যটির দাম চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ বেড়েছে। আর গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ১২৫ ডলারে এবং আগামী ২০২৩ সালে ১৫০ ডলারে উঠতে পারে। এর আগে ২০০৮ সালে জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ১৪৭ ডলারে উঠেছিল, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
সূত্র: বিবিসি, সিএনবিসি



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: