শনিবার, ২৫শে অক্টোবর ২০২৫, ১০ই কার্তিক ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ভারতের ২ রাজ্যে ৬৪ শিশুর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছে ‘দিওয়ালি খেলনা’


প্রকাশিত:
২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৫৩

আপডেট:
২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:২৮

ফাইল ছবি

ভারতের সব রাজ্যেই মহাসমারোহে উদযাপন করা হয় দীপাবলি উৎসব। প্রদীপ জ্বালানো, আলোকসজ্জার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পটকা ফাটানো এই উৎবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্বাভাবিক কারণেই পটকা ফাটানোর ব্যাপারটি শিশু-কিশোরদের কাছে খুব জনপ্রিয়।

কিন্তু এবারের দীপাবলিতে ‘দিওয়ালি খেলনা’ নামে পরিচিত হাতে বানানো একপ্রকার বন্দুক দিয়ে পটকা ফাটাতে গিয়ে ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও বিহারে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কমপক্ষে ৬৪ জন শিশু-কিশোর-কিশোরী। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শিশু-কিশোরদের কাছে দীপাবলী উদযাপনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে স্থানীয়ভাবে নির্মিত একপ্রকার কার্বাইড বন্দুক। অনেক জায়গায় এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘দিওয়ালি খেলনা’ নামে। এই বন্দুকটি ব্যবহার করে পটকা তৈরি এবং বিকট শব্দে তা ফাটানো যায়। শিশুদের কাছে এই বন্দুক বা খেলনর জনপ্রিতার কারণ এটাই।

তবে এটি যে বেশ বিপজ্জনক একটি বস্তু, তার প্রমাণ পাওয়া গেলো এবারের দীপাবলিতে। গত ২০ অক্টোবর দীপাবলি উৎসব উদাপিত হয়েছে ভারতে। তারপর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে ভারতের মধ্যপ্রদেশ তিন দিনে চোখে গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শত শত জনেরও বেশি শিশু-কিশোর-কিশোরী। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৪ জন আর কখনও তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে না।

বিহারে এই সংখ্যা আরও বেশি। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের তথ্য অনুসারে, শুধু রাজধানী পাটনাতেই স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কমপক্ষে ৫০ জন শিশু-কিশোর-কিশোরী। বিহার ও মধ্যপ্রদেশের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানো শিশু-কিশোরদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

কার্বাইড বন্দুক

কার্বাইড বন্দুক বা ‘দিওয়ালি খেলনা’ হলো ঘরে তৈরি বা হাতে বানানো একপ্রকার পটকা উৎক্ষেপণ যন্ত্র বা ‘পটকা লাঞ্চার’। নলাকৃতির এই বন্দুকটির ভেতরেই ক্যালসিায়াম কার্বাইড এবং পানি ব্যবহার করে পটকা তৈরি করা যায় এবং পটকা তৈরির পর ট্রিগার হিসেবে ব্যবহৃত একটি লিভারে চাপ দিতেই পটকাটি উৎক্ষিপ্ত হয়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়।

তবে অনেক সময় লিভারে চাপ দেওয়া মাত্রই পটকার উৎক্ষেপণ ও বিস্ফোরণ হয় না, কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। এ সময় কোনো কৌতুহলী শিশু-কিশোর যদি সে সময় বন্দুকের নলে চোখ রাখে, তাহলে হঠাৎ বিস্ফোরণে ওই শিশু কিংবা কিশোরের চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। তীব্র বিস্ফোরণে চোখের কর্নিয়া, আইরিস এবং রেটিনা সম্পূর্ণ পুড়ে যায় এবং তার ফলে অনিবার্য অন্ধত্ব বরণ করতে হয় বিস্ফোরণের শিকার শিশু-কিশোর-কিশোরীকে।

‘খেলনা’ হিসেবে বিক্রি হওয়া এই বন্দুকটি দামে বেশ সস্তা, মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৯ থেকে ২৭৮ টাকা। চিকিৎসকদের মতে, নামে ‘খেলনা’ হলেও এটি আসলে এক প্রকার বিপজ্জনক প্রাণঘাতী অস্ত্র।

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের হামিদিয়া হাসপাতালে চোখে আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১৭ বছরের তরুণী নেহা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে সে বলেছে, “আমরা একটি কার্বাইড বন্দুক কিনেছিলাম। দীপাবলীর দিন যখন সেটি দিয়ে ভাই-বোনরা পটকা ফাটাচ্ছি— সে সময় হঠাৎ আমার এক চোখে আঘাত লাগে। আমি ওই চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।”

ভোপাল মেমোরিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের (বিএসএইচআরসি) চক্ষুবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডা. হেমলতা যাদব স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক জাগরণকে বলেন, “কার্বাইড বন্দুক শুধু পটকা-ছোড়া যন্ত্র নয়। এটা আসলে একপ্রকার রাসায়নিক বোমা।”

প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে কার্বাইড বন্দুক তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে এ বছর এ বন্দুক দেদার বিক্রি হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে।

সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top