আরও ৪ শতাধিক বন্দির মুক্তি দিলো রাশিয়া-ইউক্রেন
 প্রকাশিত: 
                                                ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:০৩
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:২৪
                                                
 
                                        ইউক্রেন এবং রাশিয়া আরও চার শতাধিক যুদ্ধবন্দির মুক্তি দিয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, উভয় পক্ষই ১৯৫ সেনার মুক্তি দিয়েছে। তবে ইউক্রেনের দাবি, দুই শতাধিক বন্দি দেশে ফিরে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ান বিমানের বিধ্বস্ত ও ৬৫ ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দি প্রাণ হারানোর পর এই প্রথম বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করল রাশিয়া ও ইউক্রেন। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলছে, বুধবার উভয় পক্ষ ১৯৫ জন করে সৈন্য ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ২০৭ ইউক্রেনীয় সেনাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত মাসের শেষ সপ্তাহে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ইউশিন আইএল-৭৬ বিমান বিধ্বস্ত হয়। রাশিয়ার দাবি, বিমানটিতে ইউক্রেনের ৬৫ যুদ্ধবন্দি ছিলেন। তবে কিয়েভ মস্কোর এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার দাবি করেছেন, আইএল-৭৬ সামরিক পরিবহন বিমানটি আমেরিকান প্যাট্রিয়ট সিস্টেম ব্যবহার করে পশ্চিম বেলগোরোড অঞ্চলে ইউক্রেন ভূপাতিত করেছে। তবে নিজের এই দাবির বিষয়ে তিনি কোনও প্রমাণ দেননি।
রাশিয়ান সামরিক বাহিনী পূর্বে বলেছিল, বিমানটিতে কয়েক ডজন ইউক্রেনীয় সৈন্য ছিল। বন্দি বিনিময়ের জন্য তাদের ওই এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এছাড়া বিমানটিতে ছয় রাশিয়ান ক্রু সদস্য এবং তিনজন এসকর্টিং কর্মকর্তাও ছিলেন। দুর্ঘটনায় তারা সবাই প্রাণ হারান।
বিবিসি বলছে, বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে রাশিয়া এখনও পর্যন্ত তার দাবির পক্ষে কোনও দৃঢ় প্রমাণ তৈরি করতে পারেনি এবং অতীতে রুশ কর্মকর্তাদের মিথ্যা এবং ভুয়া তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ও প্রমাণিত ইতিহাসও রয়েছে।
কিয়েভ অবশ্য সরাসরি রাশিয়ার ওই বিবৃতি অস্বীকার করেনি। তবে বলেছে, এখনও কিছুই নিশ্চিত করা হয়নি। গত সপ্তাহে কিয়েভের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছিলেন, বিধ্বস্ত হওয়া রুশ আইএল-৭৬ বিমানে যুদ্ধবন্দি থাকার সম্ভাবনা তিনি ‘বাদ দিচ্ছেন না’।
অন্যান্য সরকারি বিবৃতিতেও রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ইউক্রেনের অধিকার সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে বেলগোরোড থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু ইউক্রেনের অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন, নিজেদের দাবির সমর্থনে কেন রাশিয়া বিমান দুর্ঘটনার পর নিহতদের মৃতদেহের ছবি এখনও সামনে আনেনি। আর তাই বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কোনও কিছুই এখনও স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি এবং উভয় পক্ষই আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
বিবিসি বলছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে বুধবারের বন্দি বিনিময়টি ছিল ৫০ তম বার যুদ্ধবন্দি অদলবদল। এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আলোচনার পরে সর্বশেষ এই বন্দি বিনিময়টি সম্পন্ন হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘মুক্ত হওয়া সামরিক কর্মীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সামরিক পরিবহন বিমানে করে... মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হবে। যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের সকলকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ান সৈন্যরা মস্কোতে যাওয়ার আগে বাসে চড়ছেন।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন: ‘আমাদের লোকেরা ফিরে এসেছে। তাদের (বন্দিদের) মধ্যে ২০৭ জন ফিরে এসেছেন। যাই হোক না কেন, আমরা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক ইউক্রেনীয়কে বন্দিকে মনে রাখি। যোদ্ধা এবং বেসামরিক উভয়দেরই আমরা মনে রাখি। আমাদের অবশ্যই তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’
এসময় সর্বশেষ এই বন্দি বিনিময় সম্ভব করার জন্য ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান জেলেনস্কি।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের ধারণ করা বেশ কিছু ভিডিওতে মুক্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধবন্দিদের উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। একজন সৈনিক মাটিতে পড়ে, বরফের মধ্যে গড়াগড়ি দেন। তিনি ফিরে আসতে পেরে খুব আনন্দিত বলে জানান।
কেউ কেউ আনন্দে কাঁদছিলেন, অনেকে ফোনে কথা বলেছেন স্বজনদের সঙ্গে। ভিডিওটির শেষে সবাইকে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের নীল-হলুদ পতাকা শরীরে মোড়ানো অবস্থায় দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়।
বিবিসি বলছে, নিরাপত্তার জন্য বন্দি বিনিময় না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। ইউক্রেন নিশ্চিত করেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই বন্দি বিনিময়ে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে যুক্ত ছিল।
এর আগে গত জানুয়ারি মাসের শুরুতেও আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ৫০০ বন্দির মুক্তি দিয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন।
এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের সমন্বয় কেন্দ্র জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ন্যাশনাল গার্ড সদস্য, সীমান্তরক্ষী এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: