বৈরুত বিস্ফোরণ
সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে লেবাননবাসী
 প্রকাশিত: 
                                                ৭ আগস্ট ২০২০ ১৬:২৯
 আপডেট:
 ৭ আগস্ট ২০২০ ১৭:৩৮
                                                
 
                                        লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। তারা বলছে, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অবহেলার কারণেই এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননের পার্লামেন্টের কাছে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অনেক মানুষ। সেখানে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ বলছে, বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় আগুন ধরিয়েছে, দোকান ভাঙচুর করেছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথরও ছুড়েছে। আর এ জন্য নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয়েছে। এরই মধ্যে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এদিকে, বৈরুত বিস্ফোরণে সরকারের অবহেলাকে দায়ী করে পদত্যাগ করেছেন জর্ডানে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি চামৌন। তিনি বলেন, ‘এ বিস্ফোরণ আমাদের দেখিয়ে দিল, লেবাননে নেতৃত্বের পরিবর্তন প্রয়োজন।’
লেবাননে বিস্ফোরণের পর এ নিয়ে দুজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করলেন। এর আগে পদত্যাগ করেছিলেন দেশটির সংসদ সদস্য মারওয়ান হামাদেহ। তিনি বলেছিলেন, বৈরুতে বিস্ফোরণের পর এমন ‘অকার্যকর সরকারের’ অংশ হয়ে তিনি আর সম্মানিত বোধ করছেন না।

লেবানন পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ছবি : সংগৃহীত
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
সামরিক আদালতের সরকারি প্রতিনিধি ফাদি আকিকি জানিয়েছেন, তদন্তের অংশ হিসেবে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে ওই ১৬ জনের নাম উল্লেখ করেননি তিনি। আকিকি জানান, তদন্তের কাজ চলছে।
বৈরুতে গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে অন্তত ১৩৭ জন নিহত এবং পাঁচ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়েছে। বিস্ফোরণের পর লেবাননে দুই সপ্তাহের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন জানান, বৈরুত বন্দর এলাকার একটি ওয়্যারহাউসে দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক পদার্থ অনিরাপদভাবে মজুদ করে রাখা হয়েছিল।
লেবাননের কাস্টমসপ্রধান বাদ্রি দাহের জানান, তাঁর সংস্থার পক্ষ থেকে ওয়্যারহাউসের রাসায়নিক পদার্থ সরিয়ে নিতে বলার পরও তা সরানো হয়নি।
বলার পরও কেন সরানো হলো না, সে বিষয়ে বাদ্রি দাহের বলেন, ‘এর কারণ জানার দায়িত্ব আমরা বিশেষজ্ঞদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি।’
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত সার ও বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বৈরুতের বিস্ফোরণের মাত্রা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা শহরে আণবিক বোমা বিস্ফোরণের ১০ ভাগের এক ভাগ। তবে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের হিসাব বাদ দিলে বৈরুতের বিস্ফোরণকে ‘মানব ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিস্ফোরণকাণ্ড’ বলছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা।
বৈরুতের গভর্নর মারওয়ান অবুদ জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্রয়, খাদ্য এবং পানি সরবরাহে কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বা তার বেশিও হতে পারে।
বিস্ফোরণের পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকে বসে লেবাননের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা পরিষদ। বৈঠক শেষে এক বিবৃতির মাধ্যমে দেশটির প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং ১০ হাজার কোটি লেবাননি পাউন্ড সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ দেন।
লেবাননের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা পরিষদ বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: