বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ঠা পৌষ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ব্যাংক সংস্কার

সরকারের কাছে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা চাইবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক


প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫০

আপডেট:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৪৪

ফাইল ছবি

সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক গঠনের সরকারের কাছ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক সংস্কারের জন্য আগামী বাজেট থেকেও ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার পল্টনে ‘ব্যাংকিং সেক্টর রিফর্ম : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক’ গঠন করা হয়েছে। আমরা এখনই আরও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক একত্রিত করতে পারি না কারণ আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংক সংস্কারের জন্য এবছর বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নেওয়া হয়েছে। এটা বাজেটে লক্ষ্য ছিল না। তবে আরও ব্যাংক সংস্কারের জন্য আগামী বাজেট থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইবে বলে তিনি জানান।

সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক’ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূত নিয়ে নানা আইনি জটিলতা ছিল, দূর করা হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে ব্যাংকের নাম, সাইনবোর্ড পরিবর্তন করা হবে। ব্যাংকের শাখার নাম পরিবর্তন হবে। পাঁচ ব্যাংক শাখা এক জায়গায় থাকলে, সেখানে একটি শাখা রেখে বাকিগুলো অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হবে। বিমার আওয়ায় ব্যাংকের আমানতকারীরা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত খব শিগগিরই ফেরত পাবে।

ঋণ অনিয়মের জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে জানিয়ে গভর্নর বলেন, কোনো সময় এক হাতে যেমন তালি বাজে না। তেম‌নে শুধু পরিচালনা পর্ষদ একা ব্যাংক ধ্বংস করতে পারে না। তাই আগামীতে পর্ষদ সদস্যদের পাশাপাশি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এমন ভা‌বেই আইনি কাঠা‌মো তৈ‌রি কর‌ছি। তাই আগামীতে কর্মকর্তারা আর ছাড় পাবেন না বলে জানান গভর্নর।

এছাড়া এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান এখন থেকে ২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে। এসব ঋণের জামানত ঠিক আছে কি না, তা দেখা হবে। না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা দরকার জানিয়ে গভর্নর বলেন, এখানে (কেন্দ্রীয় ব্যাংকে) ভালো নেতা দরকার। এ জন্য সরকারের কাছে আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সরকার এই আইন পাস করে দিলে সব করা যাবে।

বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিল কারা পাবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, যেসব কারখানা বর্তমানে সচল রয়েছে এবং নিয়মিত পণ্য উৎপাদন করছে, শুধুমাত্র তারাই পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা পাবে। কোনো বন্ধ বা অচল কারখানাকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে না।

দুর্বল ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো একীভুত করা হবে না লিকুইডেশন করা হবে (তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে দেনা-পাওনা পরিশোধ করার করা হবে)। এসব প্রতিষ্ঠানের সব সাধারণ আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী একটা অংশ ফেরত পাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মে শেয়ার হোল্ডারদের শেয়ার শূন্য করা হবে।

সম্প্রতি অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকতে থাকা ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতিএই তিন সূচককে ভিত্তি ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অব্যবহারযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

একই অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আসন্ন নির্বাচন একটি সন্ধিক্ষণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে কীভাবে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের পরিষ্কার করতে হবে যে তারা কি আগের মতো ক্ষমতাশালী পুঁজিপতিদের হাতে ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করতে দেবেন, নাকি জনগণের কল্যাণে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি জোগানের জন্য এই খাতকে ব্যবহার করবেন

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরের পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে চ্যালেঞ্জ হলো খেলাপি ঋণ। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যারা ঋণ নিচ্ছেন, তারা এটা ভাবা বাদ দেন যে টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে না। তবে খেলাপি পরিস্থিতির উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি।

গত সরকারের আমলে ব্যাংকে মাফিয়াতন্ত্র শুরু হয় জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালেও খেলাপি ঋণের অবস্থা সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল। আট হাজারের মত ছিল খেলাপি ঋণ, তখন সবকিছু ভালো ছিল; কিছু কিছু যে খারাপ ছিল না তা অবশ্য না। ইসলামী ব্যাংক দখল নেওয়ার পরেই ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। একটা মাফিয়াতন্ত্র শুরু হয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া আগে রিজার্ভ যেটা কমছিল, সেটা এখন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে না, বরং বাজার থেকে থেকে কিনতেছে। ডলার মার্কেটে যে অস্থিরতা ছিল, সেটা এখন নেই।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি দৌলত আকতার মালার। আর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top