পুঁজিবাজারে সাপ্তাহিক গড় লেনদেন কমেছে ৩৯ শতাংশ
প্রকাশিত:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৩৭
আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৭

গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের (১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ৩ দিনেই বাজার নিম্নমুখী ছিল। আলোচিত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির সবগুলো মূল্যসূচক ১ শতাংশের বেশি কমেছে। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের দরপতন হয়েছে। পাশাপাশি সাপ্তাহিক গড় লেনদেন কমেছে ৩৯ শতাংশের বেশি। এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধনও কিছুটা কমেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ৭৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৫২৪ পয়েন্টে। বাছাই করা ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস ৩০ কমেছে ৪৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহের ২ হাজার ১৫১ পয়েন্ট থেকে কমে সূচকটি ২ হাজার ১০৭ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আর শরীয়াহ কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসইএস ১ হাজার ১৯৬ পয়েন্ট থেকে কমে ১ হাজার ১৭৮ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ১৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭টি শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। তালিকাভুক্ত আরও ১৬টি শেয়ার ও ইউনিটের সপ্তাহজুড়ে কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৮টির। কমেছে ৩০৬টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির।
গেল সপ্তাহে সূচক ও অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরপতনের পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন বড় পরিমাণে কমেছে। আলোচিত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৭০১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে যা হয়েছিল ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসইতে প্রতিদিন গড় লেনদেন কমেছে ৪৪৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
সার্বিকভাবে গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে এই লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের। প্রতিদিন গড়ে এই খাত থেকে ৯৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন এসেছে ব্যাংক খাতে, প্রতিদিন গড়ে যা ছিল ৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান ছিল প্রকৌশল খাতে, প্রতিদিন গড়ে যার পরিমাণ ছিল ৭৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এছাড়া বস্ত্র খাত এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে যথাক্রমে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ডিএসইতে অবদান রেখেছে।
লেনদেন ও সূচকে মন্দাভাবের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে ঢাকার এই স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধনও কমেছে। পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এক্সচেঞ্জটি বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকায়, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
খাতভিত্তিক মুনাফা চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে শুধু পাঁচটি খাত বাদে সবগুলো খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। সপ্তাহজুড়ে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে করপোরেট বন্ড খাতে, যা ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই খাতে তালিকাভুক্ত ১৬টি বন্ডের মধ্যে ১০টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে, কমেছে ২টির আর বেড়েছে ৪টির ইউনিট দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে সেবা ও আবাসন খাতে, যার হার ছিল ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই খাতে তালিকভুক্ত ৪টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৩টির দর কমলেও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের বড় দরবৃদ্ধি এই ইতিবাচক রিটার্ন এনেছে। এছাড়া বস্ত্র খাত দশমিক ৭০, প্রকৌশল খাতে দশমিক ৬১ শতাংশ এবং সিমেন্ট খাতে দশমিক ৪৭ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে গত সপ্তাহে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে, যার হার ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই খাতে তালিকভুক্ত ২৩ কোম্পানির মধ্যে ২২টির দরপতন হয়েছে, বেড়েছে শুধু একটির দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে, যার হার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। খাতটির ৫টি কোম্পানির মধ্যে ৪টির দরপতন হয়েছে, একটির দর অপরিবর্তিত ছিল। জীবন বীমা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এই খাতের ১৫ কোম্পানির মধ্যে ১৪টির দরপতন হয়েছে, একটির বেড়েছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে।
সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সূচক দুটির অবস্থান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৩৩৮ পয়েন্টে এবং ৯ হাজার ৪১৯ পয়েন্টে।
এ ছাড়া সিএসআই সূচক শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৭১ পয়েন্টে এবং ১৩ হাজার ৪০৯ পয়েন্টে। আর সিএসই-৫০ সূচকটি ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।
গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৯২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ২৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে এক্সচেঞ্জটিতে ৩১২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ১৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: