২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ
 প্রকাশিত: 
                                                ৩০ জুন ২০২৪ ১০:৪২
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০৮
                                                
 
                                        ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে প্রস্তাবিত এই বাজেট।
আজ (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে পাস হবে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট হতে যাচ্ছে এটি।
এর আগে শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে কয়েকটি সংশোধনীসহ অর্থবিল-২০২৪ পাস হয়েছে। বিলটি পাসের আগে বিলের উপর সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ বহাল রাখা হয়। এছাড়া ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে অর্থবিলের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও হামিদুল হক খন্দকার এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তবে তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলের উপর সরকার দলীয় সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ও আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী সংশোধনী আনেন এবং তা গৃহীত হয়।
বিলের উপর জনমত বাছাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিলে সরকারের দ্বিমুখী অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান। যেখানে বৈধ আয়ের জন্য ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। সেখানে অবৈধ আয়ের জন্য ১৫ শতাংশ কর কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ এই সুযোগ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেছেন। সরকারকে এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
তামাকজাত পণ্যের উপর সারচার্জ বাড়ানোর দাবি জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ এখনো তামাকের কারণে দেশে প্রতিদিন ৪৪১ জন মারা যান। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সারচার্জ বাড়াতে হবে।
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকসুদের হার বাজারভিত্তিক ও নীতি সুদহার প্রবর্তন করা হয়েছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে ক্রলিংপেগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। 
তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সব সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ১১টি পদক্ষেপ পূরণে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হলে ২০৪১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। খাদ্য নিরাপত্তায় টিসিবির মাধ্যমে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, ওএমস কার্যক্রম চালু রাখা ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
সংসদে পাস হওয়া বিলে ২০২৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে শুরু অর্থ বছরের জন্য আর্থিক বিধান, বিদ্যমান আইন সংশোধনীসহ কর প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্য (এমপি) নতুন নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া সম্পদশালীদের কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির পরিবেশ সারচার্জ মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া রিটার্নে আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় দেখানো হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলবে না।
এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ আয়কে করের আওতার বাইরে রাখার বিধান যুক্ত করা হয়েছে আয়কর আইনে। হয়রানি কমিয়ে আনতে অডিটের শর্ত শিথিল করা হবে। এজন্য অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী। নতুন নিয়মে আগের বছরের চেয়ে রিটার্নে ১৫ শতাংশ আয় বেশি দেখালে ট্যাক্স ফাইল অডিটে ফেলা হবে না। সংশোধিত রিটার্নের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য থাকবে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা এ সুযোগ পাবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি-প্লট-ফ্ল্যাট দান বা হেবা দলিলের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছিল বিধায় সাধারণ বেচাকেনার মতো হেবা দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় এলাকা, জমির শ্রেণি অনুযায়ী হস্তান্তরকারীকে নির্দিষ্ট হারে আয়কর দিতে হতো। সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ আগের নিয়মেই উৎসে কর পরিশোধ ছাড়াই আপন ভাই-বোন, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদি, নানা-নানি ও নাতি-নাতনির সম্পর্কের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে হেবা দলিল করা যাবে। বর্তমানে হেবা দলিলে ২ হাজার ৫১০ টাকা কর দিতে হয়। কোম্পানির মতো তহবিল ও ট্রাস্টের মূলধনি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স বসানো হচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল গেইন করমুক্ত থাকছে। তবে মূলধনী আয় ৫০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে গেইন ট্যাক্স দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে গেইন ট্যাক্স আদায় করা হবে।
বিলের বিধান অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্র আমদানি শুল্কমুক্তই থাকছে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্কারোপের প্রস্তাব করেছিলেন তবে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধার কথা জানিয়েছিল সরকার। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর এক শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব থেকে সরে আসছে সরকার।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এই শুল্কারোপের কথা বলেছিলেন। পরে ব্যবসায়ীরা তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, কর অবকাশ সুবিধার কথা জেনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এসেছে। এই এক শতাংশ শুল্কারোপ সেই বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। বিরোধী দলগুলোও এই শুল্ক প্রস্তাবের সমালোচনা করে আসছিল। এছাড়া ২৯ মে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ ৮টি কর সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা তুলে নেওয়ার ফলে শিল্পভেদে কোম্পানিগুলোর আয়ের ওপর করহার ২০-২৭.৫ শতাংশ বা এরও বেশি প্রযোজ্য হওয়ার কথা।
এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কারিগরি সহায়তাকারী হিসাবে কর্মরত বিদেশিদের প্রথম তিন বছরের বেতনের ওপর ৫০ শতাংশ আয়কর ছাড় পেত। সেটিও বাতিল করা হয়। এসব অঞ্চলে স্থাপিত কোম্পানির ১০ বছরের জন্য লভ্যাংশ, মূলধনী আয়, রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নো-হাউ এবং কারিগরি সহায়তা ফির ওপরও ১০ বছরের কর অব্যাহতি ছিল, এগুলোও বাতিল করা হয়। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাপে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। অর্থাৎ বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা আগের মতোই কর অবকাশ সুবিধা পাবে। এছাড়া কালোটাকা সাদা করার ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা এবং বর্গমিটার প্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট রিটার্নে প্রদর্শনের সুযোগ থাকছে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: